চাঁদপুরে আবারো ধরা পড়েছে বিষধর রাসেল ভাইপার

স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন এলাকার মোল হেডের নদীর পাড়ে কচুরিপানার ওপর থেকে ধরা হয়েছে প্রায় ৩ ফুট লম্বা ভয়ংকর বিষধর ও বিরল প্রজাতির রাসেল ভাইপার সাপ, বাংলায় যাকে বলা হয় চন্দ্রাবোড়া। গত মঙ্গলবার দুপুরে সাপটিকে চাঁদপুরের বন বিভাগ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
সাপটি ধরেছেন চাঁদপুর শহরের নিউ ট্রাক রোড এলাকার গাজী বাড়ির মৃত শহীদ উল্লাহ গাজীর ছেলে শামীম গাজী ওরফে সামু। পরে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রতিনিধিদের হাতে হস্তান্তর করা হয়।
সামুর দাবি, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে স্বপ্নের মাধ্যমে দেখতে পান এ জাতীয় একটি সাপ তার শরীরের সাথে জড়িয়ে আছে। পরে তিনি সাপটি তাকে বলছে ‘আমাকে বাচাঁও’। এসময় সাপটি হাতে ধরে তিনি ভয় পান এবং চিৎকার দিয়ে উঠেন।
পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর শহরের বড় স্টেশন এলাকায় কেউ একজন রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলে লোকজন এসে ভিড় জমায়। ওইসময় শামীম গাজী ওরফে সামু বড় স্টেশন এলাকায় মাছ কেনার জন্য গেলে বিষয়টি জানতে পারেন। পরে তিনি সাপটিকে ধরে তিনি কৌশলে বাড়িতে এনে খাঁচায় আটকে রাখেন। এলাকাবাসীও সাপটিকে দেখতে তার বাড়িতে ভীড় করেন।
গবেষক দলের প্রধান মোহাম্মদ নোমান জানান, চন্দ্রবোড়া সাপটি অনেক বিষধর। এটি ভারত, চীন, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে আছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলায় এবং দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় রাসেল ভাইপার সাপটির অস্তিত্ব মিললেও চাঁদপুরে এটি দ্বিতীয়।
রাসেল ভাইপার একটি দুর্লভ সাপ। দেশের রাজশাহী, নাটর, নওগা, দিনাজপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর জেলায় এই ধরনের সাপ দেখতে পাওয়া গেলেও চাঁদপুরে এটি দেখা যাওয়ার কথা নয়। হয়তো বন্যার পানির সাথে ভেসে সাপটি এখানে এসে থাকতে পারে। হয়তো এটি কোন কারণে ফিরে যায় নেই।
তিনি আরো বলেন, রাসেল ভাইপারের কামড়ে বাংলাদেশে প্রথম ১৯৯৫ সালে এক সাওতাল নারী মারা যায়। তখনো বুঝা যায়নি কোন সাপে তাকে কামড়েছে। কিন্তু ২০১৩ সালে রাজশাহীতে ১৮ বছর বয়সী একটি ছেলে মারা গেলে এই সাপের অস্তিত্বের কথা প্রথম জানতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সাপের কামড়ে যত মানুষ মারা যায় তার মধ্যে রাসেল ভাইপারের কামড়েই অধিকাংশ মানুষ মারা যায়।
তিনি বলেন, এটি কামড় বসালে এর বিষ খুব দ্রুত মানুষের রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। হৃদপিন্ড অল্প সময়ে অকার্যকর হয়ে পড়ে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এই সাপটির কামড়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চাঁদপুরের প্রশাসন পক্ষে থেকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, আমার ধারণা উত্তরাঞ্চলের পানি মেঘনা হয়ে নেমে আসার সময় সাপগুলো স্রোতে চাঁদপুরে চলে আসতে পারে। পরে সাপটি ফিরে যায়নি। আমরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রতিনিধিদের হাতে সাপটি তুলে দিয়েছি। তারা সেখানে গবেষণার কাজে লাগাবেন। সাপটি অনেক বিষধর। এ ধরনের বিষধর সাপ দেখতে পেলে বিশেষজ্ঞদের জানাতে এবং সাধারণ মানুষকে সাপের কাছে না যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
চাঁদপুর সামাজিক বনায়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা সাপের খবর পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রতিনিধিদের খবর দিলে তারা চাঁদপুরে আসেন। তাদের কাছে সাপটি হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা সেখানে গবেষণার কাজে লাগাবেন।

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯।