চাঁদপুরে আ.লীগ ভোটের মাঠে এগিয়ে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ইল্শেপাড় রিপোর্ট
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ যতো কাছে আসছে চাঁদপুরে ততোই ভোটের মাঠে প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতা-কর্মীরা রাত-দিন পথে-ঘাটে নৌকার বিজয়ের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করছে। এমনকি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও এখন কাকডাকা ভোর থেকে চষে বেড়াছে দল মনোনীত প্রার্থীর সাথে। মাসখানেক আগেও যারা দলীয় মনোনয়ন পেতে একে অন্যের বিষেদগার করেছেন তারাও এখন এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভোট চাইছেন। এমনকি বর্তমানে যেসব এমপি-মন্ত্রীরা দলীয় মনোনয়ন পাননি তারাও বর্তমান প্রার্থীর পক্ষে নৌকায় ভোট দিতে অনুরোধ করছেন, নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলছেন। লক্ষ্য একটাই- নৌকার বিজয়। এ যেন দলীয় সুদৃঢ় ঐক্য। ফলে সাধারণ মানুষও তাদের অভ্যন্তরীণ এ ঐক্যকে সাদরে গ্রহণ করছে। যা ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল।
অপরদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কিংবা বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ভোটের মাঠে তেমন দেখা যাচ্ছে না। ফলে সাধারণ ভোটারদের মাঝে বিএনপির প্রচার-প্রচারণার কমতিও ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলবে বলে অভিমত সচেতন মহলের। তবে বিএনপিতে রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ কোন্দলই মূলত তাদের পিছিয়ে দিয়েছে বলে দলটির অসমর্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া রয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে অনৈক্য।
এদিকে আগামি ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন নিজদের বিজয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সব ইউনিট কেন্দ্রভিত্তিক দায়িত্ব পালনের প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করছে বলে জানা গেছে। ফলে গোছানো অবস্থায়ই আওয়ামী লীগ ভোটারদের ভোট নিজদের করে নিতে সাংগঠনিক অবস্থান নিশ্চিত করছে। পাশাপাশি গত এক দশকের উন্নয়নের চিত্র ভোটারদের সামনে তুলে ধরছে দলটি।
আওয়ামী লীগের নারী ইউনিটের কর্মীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি ঘরে ঘরে নৌকার লিফলেট ও উন্নয়নের চিত্র নিয়ে প্রচারণা অব্যাহত রাখছে। ফলে ভোটের দিন নারী ভোটারদের উপস্থিতি যতো বৃদ্ধি পবে ততোই নৌকার ভোট বৃদ্ধি পাবে। যা চূড়ান্ত ফলাফলে বড় ধরনের সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা দাবি করছে।
এদিকে চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি’র বিপরীতে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন নিজে উপস্থিত না থাকলেও তার সমর্থকদের ভোটের মাঠে দেখা যাচ্ছে। ফলে কচুয়ায়ও আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ চিত্র দেখা গেছে।
অপরদিকে এ আসনে বিএনপি’র হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. আনম এহছানুল হক মিলন ধানের শীষ না পাওয়া স্থানীয় বিএনপি নেতারা বিভ্রান্তিতে পরেছে। এছাড়া বিএনপি প্রার্থী মো. মোশারফ হোসেন মালয়েশীয় প্রবাসী হওয়ায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে তেমন পরিচিত না হওয়ায় আসনে ভোটের সমীকরণে নৌকার বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত বলে স্থানীয় ভোটাররা জানিয়েছে। এছাড়া বিএনপি প্রার্থীর কোন জনসংযোগ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসও নেই।
চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-দক্ষিণ) আসনে দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন প্রথমে নিশ্চিত হলেও শেষ মুহূর্তে এসে অ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল নৌকার টিকেট নিশ্চিত করেন। তারপরও মায়া চৌধুরী নিজে জনসভা করে নুরুল আমিন রুহুলকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে আহ্বান করেন। এছাড়া মায়া চৌধুরীর অনুসারীরা নৌকার বিজয়ের লক্ষ্যে তার সাথে একযোগে কাজ করছে। যা অ্যাড. নুরুল আমিনের হাতকে শক্তিশালী’ই করেনি বরং নৌকা জয়ের পথে নিয়ে চলছে।
চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনের প্রার্থী ডা. দীপু মনির বিপরীতে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা সুজিত রায় নন্দী, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মেয়র নাছির উদ্দিন আহম্মেদ, মৎস্যজীবী লীগ নেতা রেদওয়ান খান বোরহানসহ অন্যান্যরা ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে একযোগে কাজ করছে। ফলে এ আসনে নৌকার জয় অনেকটাই সহজ হবে জানা গেছে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড খ্যাত ছাত্রলীগ আগামি ৩০ ডিসেম্বর বিএনপির সাথে ভোটের ব্যবধান কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। যা তাদের সাংগঠনিক কর্মকা- আগের যেকোন নির্বাচনের তুলনায় বেশি বলে ছাত্রলীগের কর্মীরা জানিয়েছে। ছাত্রলীগের এ অগ্রণী ভূমিকা’ই ডা. দীপু মনির জয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।
অপরদিকে এ আসনে বিএনপি প্রার্থী জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে নিজে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করলেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যান্যদের তার সাথে দেখা যায়নি। এছাড়া গত ৪/৫ দিন যাবত তার প্রচারণাকালে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীসহ অন্যান্যরা ঐক্যবদ্ধ না হলে এর চরম মূল্য দিতে হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
চাঁদপুর-৪ (ফদিরগঞ্জ) আসনে সাংবাদিক মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সাথে একযোগে কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য ড. শামছুল হক ভূইয়া। ফলে এ আসনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন বিরোধ নেই বলে উপজেলা আওয়ামী লীগ দাবি করছে। বিপরীতে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী এম এ হান্নানের প্রার্থীতা হাইকোর্ট স্থগিত করায় বর্তমানে সেখানে তাদের কোন কার্যক্রম নেই। এছাড়া বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থকদের পুলিশি হয়রাণীও বিরোধী দলের নির্বাচনী কার্যক্রম প্রায় বন্ধ। ফলে এ আসনে নৌকার জয় এখন অনেকটাই নিশ্চিত।
চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম অতি সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সর্বমহলে খ্যাতি রয়েছে। এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতোপূর্বে মেজর রফিকের বিরোধীতা করলেও এখন এক মঞ্চে এসে নৌকার জন্য ভোট চাচ্ছেন। এছাড়া এ আসনে নেই কোন দলীয় বিভেদ। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভোটের সমীকরণে এগিয়ে রয়েছে নৌকা।
অপরদিকে এ আসনে বিএনপিতে রয়েছে মমিন-মতিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পরও ঐ বিরোধের কোন সমাধান না হওয়ায় এবং পুলিশি হয়রাণী বেড়ে যাওয়ায় বিএনপি প্রার্থী রয়েছেন চরম বেকায়দায়। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, পুলিশ গত ৭ দিনে ৭৪ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। এমনকি গণসংযোগের সময়ও পুলিশ তার পেছনে-পেছনে গিয়ে নেতাকর্মীদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে তিনি গণসংযোগ বা নির্বাচনী কার্যক্রমও ঠিকমতো পরিচালনা করতে পারছেন না।
এদিকে আগামি ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ জনগণ চায় নিজেদের ভোটারাধিকার প্রয়োগ করতে। জনগণ তাদের আমানত ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে চান তাদের প্রতিনিধিদের। যারা একটি সুন্দর, স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ নির্মাণে এগিয়ে যাবেন।