চাঁদপুরে এমদাদিয়া মাদ্রাসায় অনিয়মের প্রতিবাদে ছাত্রদের আন্দোলন

 

মুহতামিমের বহিষ্কারের দাবি ও অফিস ভাংচুর

এস এম সোহেল
চাঁদপুর জামিয়া আরাবিয়া জাফরাবাদ এমদাদিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম জাফর আহম্মেদ ও শিক্ষা সচিব মুফতি মাসুম বিল্লাহ কর্তৃক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে আন্দোলন করেছে ছাত্ররা। বুধবার (১৮ নভেম্বর) সকালে মাদ্রাসার মুহতামিম ও শিক্ষা সচিবের বহিষ্কারসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করে মাদ্রাসার ছাত্ররা। মাদ্রাসার মুহতামিম ও শিক্ষা সচিবকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটি। বর্তমানে মাদ্রাসার পরিস্থিতি থমথমে বিরাজ করছে।
এসময় আন্দোলনরত ছাত্ররা মুহতামিমের অফিসের গ্লাস ভাংচুর করে এবং মুহতামিমকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন চাঁদপুর মডেল থানা ও পুরানবাজার ফাঁড়ির পুলিশ।
এ ঘটনায় মাদ্রাসার মুহতামিম জাফর আহম্মেদ ও শিক্ষা সচিব মুফতি মাসুম বিল্লাহকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করেন ম্যানেজিং কমিটির নেতৃবৃন্দ।
আন্দোলনরতদের সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এ মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বিদ্যমান। বিনা কারণে জনপ্রিয় ও ভালো শিক্ষকদের জোর করে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। মাদ্রাসার দুর্নীতি রোধে ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমাদের দাবিগুলো মানতে হবে। অন্যথায় আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
ছাত্রদের দাবিগুলো হলো- জামিয়া আরাবিয়া জাফরাবাদ এমদাদিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম জাফর আহম্মেদ ও শিক্ষা সচিব মুফতি মাসুম বিল্লাহকে বহিষ্কার করতে হবে। মাদ্রাসায় যোগ্যতা সম্পন্ন ওস্তাদ থাকা সত্ত্বেও দিন দিন শিক্ষা কারিকুলাম অবনতির দিকে যাচ্ছে কেন? মসজিদের দানকৃত টাইলস, মাদ্রাসার লিল্লা-বডিংয়ের ছাগল, ইলিশ মাছ, চাল, ডাল মুহতামিম ও দালাল চক্রের বাড়িতে কেন? বোর্ডিংয়ের খাবারের মান খারাপ কেন? চাল ডাল সব কিছুতো লিল্লা-ফান্ড থেকেই আসে। মুহতামিম সাহেবের অফিসের খাবার মান এবং শিক্ষক-ছাত্রের খানের মান ভিন্ন কেন? হঠাৎ করে দু’জন সুযোগ্য হাফেজ সাহেব (হাফেজ নূর মোহাম্মদ ও অত্র এলাকার কৃতীসন্তান যিনি এই মাদ্রাসায় দীর্ঘ ২০ বছর কোরআনের খেদমত করে আসছেন) মাদ্রাসা থেকে চলে যাওয়ার কারণ কি? তারা কি স্বেচ্ছায় গিয়েছেন নাকি যেতে বাধ্য করা হয়েছে? ইতোপূর্বে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন ওস্তাদদের কোন প্রকার নোটিশ ছাড়া বিনা কারণে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হল কেন- যেমন মুফতি শাহাদাত হোসাইন কাসেমী, মুফতি ইসমাইল সাহেব (দা: বা)। গতবছর পবিত্র ঈদুল আযহার দিন নূরানী বিভাগের একজন ওস্তাদ ক্বারী রফিকুল ইসলাম সাহেবকে চামড়া কম কালেকশন করায়) মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়? মাদ্রাসার ওস্তাদদের বেতন এত আটকে রাখা হয় কেন? অথচ মাদ্রাসার ছাত্রদের ভর্তি টাকা, বোর্ডিং ফী বেতন ও দান আসা সত্ত্বেও কেন হিসেবে এত কারচুপি করা হচ্ছে? এর সঠিক অডিট চাই! মাদ্রাসার বাবুর্চিকে কেন মুহতামিম সাহেবের বাড়ির কাজে ব্যবহার করা হবে?
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) স্নিগ্ধা সরকার, চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাসিম উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) হারুনুর রশিদ, পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এসময় মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি আলহাজ বিল্লাল হোসেন পাটোয়ারী, কোষাধক্ষ্য আলহাজ আবুল কাসেম গাজী, সদস্য আলহাজ হারুন খান তাৎক্ষণিক শিক্ষকদের নিয়ে সভা করে এমদাদিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম জাফর আহম্মেদ ও শিক্ষা সচিব মুফতি মাসুম বিল্লাহকে সাময়িক অব্যহতি প্রদান করে। আগামি শনিবার বাদ জোহর অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ বাকি সিদ্ধান্ত প্রদান করা হবে।
এ ব্যপারে জামিয়া আরাবিয়া জাফরাবাদ এমদাদিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম জাফর আহম্মেদ জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক। যাচাই-বাছাইয়ের সত্যতা বেরিয়ে আসবে। স্থানীয় কয়েকজনের উস্কানিতে ছাত্ররা এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে।
১৯ নভেম্বর, ২০২০।