চাঁদপুরে কালের বিবর্তনে বিলপ্তির পথে শিমুল গাছ

 

আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত তুলার অভাব প্রকট

মোজাম্মেল প্রধান হাসিব
চাঁদপুর সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিমুল গাছ। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে ফাগুনের চোখ ধাঁধানো ঋতুরাজ ও মনোমুগ্ধকর শিমুল ফুলও। ফলে মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত তুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ জেলার মানুষ। দেখা দিচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত দেশি তুলার তীব্র সংকট। কালের বিবর্তনে শিমুল গাছ রোপণ ও পরিচর্যার সরকারি-বেসরকারি কোন উদ্যোগ না থাকায় বিলুপ্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
জানা যায়, বিগত ১০/১৫ বছর আগেও চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে-কানাচে রাস্তার পাশে চোখে পড়তো অসংখ্য শিমুল গাছ। এসব গাছে ফুটন্ত শিমুল ফুলের সমারোহ জানান দিতো প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে। প্রস্ফূটিত ফুলে পুরো এলাকা এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে উঠতো। যা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। প্রাকৃতিকভাবে সাজিয়ে উঠা এসব শিমুলের তুলা দিয়ে লেপ, তোষক, বালিশ ইত্যাদি তৈরি করা হতো। যা ব্যবহারে খুবই আরামদায়ক এবং স্বাস্থ্যসম্মত। আবার এসব শিমুল তুলা গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে সংসারের অর্থের যোগান হতো কৃষকদের। পাশাপাশি নিজেদের লেপ, তোষক এবং বালিশের চাহিদাও মেটানো হতো। অথচ বর্তমানে মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে কারণে অকারণে কেটে ফেলছে।
জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মো. সাখাওয়াত সুমন প্রধান জানান, প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে বর্ধনশীল গাছের প্রতি মানুষ ঝুঁকে পড়ায় শিমুল গাছ এখন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা বিলুপ্ত কথাটি শুনতে চাই না। আমরা চাই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এ প্রয়োজনীয় এবং ঔষুধি গাছটি আমাদের মাঝে বেচে থাক চিরদিন।
হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মোহাম্মদ হাসান মিয়া জানান, দিন দিন শিমুল গাছ কমে যাওয়ায় দেশি তুলা খুঁজে পাওয়া এখন দুষ্কর। বিগত ১০/১৫ বছর আগে প্রতি কেজি দেশি শিমুল তুলা বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। বর্তমানে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা দিয়েও ১ কেজি দেশি শিমুল তুলা পাওয়া যায় না।
প্রযুক্তির সাথে সাথে কৃত্রিমতার দিকে মানুষ ঝুঁকে পড়ায় শিমুল গাছসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির গাছ পর্যায়ক্রমে এদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর এর ফলে দেখা দিচ্ছে দেশি প্রজাতির সৌন্দর্য ও নানা উপকারি এবং অর্থনৈতিক গাছের তীব্র সংকট।
জেলার সচেতন মহল মনে করেন, শিমুল গাছ রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা না নিলে এক সময় উপকারী গাছের তালিকা থেকে এ শিমুল গাছটি হারিয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো জানতেও পারবে না শিমুল নামের কোন গাছ ছিল।
২২ মার্চ, ২০২১।