চাঁদপুরে জনমনে করোনা নিয়ে উদাসীনতা

নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি নেই



ইল্শেপাড় রিপোর্ট
সারা বিশ্বেকে জানান দেয়া প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস এখন আতংক হয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। গত ৮ মার্চ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করে। পরবর্তীতে আইইডিসিআর তাদের বার্তায় দেশবাসীকে জানিয়ে দেয়, দেশে করোনা সংক্রমন শুরু হয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানটি দেশবাসীকে আতংক নয়, সচেতনতার মাধ্যমেই সবাইকে করোনাভাইরাস মকোবেলা করার জন্য পরামর্শ দেয়।
গত বছর চীনের উহান প্রদাশে করোনা ভাইরাস প্রথম ছোবল হানে। চীনে করোনার ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে সারা বিশ্বের মানুষ। তারপর থেকে একের পর এক দেশ আক্রমন করে করোনাভাইরাস। এখন ইউরোপের ইতালি আর এশিয়ার ইরানে ভয়ঙ্কর তান্ডব চালিয়ে আসছে ভাইরাসটি। পাশাপাশি বিশ্বের পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও করোনা মোকাবেলায় নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে।
তবে চীনের ভয়াবহতা রোধ করা সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র পুরো উহান প্রদেশকে লকডাউন আর সর্বসাধারণকে হোম কোয়ারেন্টাইনসহ আক্রান্তকারীদের আইসোলশনে নিয়ে আসার মাধ্যমে। ফলে সতর্কতাই যে নিরাপদ, সে বার্তাই দেয় চীন বিশ্ববাসীকে। ফলে করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য আক্রান্ত বিশ্ব নিজ-নিজ দেশের জনসাধারণকে হোম কোয়ারেন্টাইন রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন।
এদিকে বাংলাদেশে আইইডিসিআর প্রতিদিনই কম-বেশি করোনা রোগী শনাক্ত করার খবর দিচ্ছেন দেশবাসীকে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ৩ ব্যক্তির মৃত্যুর খবরও নিশ্চিত করছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাউর আছে আইইডিসিআর’র সক্ষমতা নিয়ে। দেশের একমাত্র করোনা সনাক্তকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে পারছেন কি-না?
এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশেই কমবেশি আতংক আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে জনসাধারণের মাঝে। এই পরিস্থিতিতে চাঁদপুরের সর্বত্র লক্ষ্য করা গেছে ভিন্ন চিত্র। কেউ কেউ বলছে প্রশাসনিক তদারকির স্বল্পতার কারণেই সাধারণ মানুষ হাটে-বাজারে নিজ-নিজ কাজে ব্যস্ত থাকাছে। এমনকি জেলা সদরের শহরেও মানুষের অবাধ বিচরণ অনেককে ভাবিয়ে তুলছে। সর্বসাধারণের অবাধ জীবন-যাপন আর চলাফেরার কারণে, কখন যে পুরো চাঁদপুর জেলাময় করোনার প্রকোপে ছাপিয়ে যায়! এমন আতংক সচেতন মহলে।
আশার কথা, গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে জেলা প্রশাসন থেকে চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিভিন্ন হাট-বাজার বন্ধ করা নির্দেশ দেয়া হয়। গতকাল বিকেল থেকেই বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা সেই নির্দেশ মাইকে প্রচার করতে থাকেন। কিন্তু স্বাভাবিকের তুলনায় চাঁদপুর শহরে জনসমাগম কিছুটা কমলেও গতকালও অবাধে মানুষ চলাফেরা করছে। এছাড়া আজ মঙ্গলবার থেকে সেনাবাহিনী মাঠে নামলে হয়তো মানুষের চলাফেরা আরো নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে সেনাবাহিনী কবে নাগাদ মাঠে নামবে তাও নিশ্চিত নয় প্রশাসন। গতকাল সোমবার সেনাবাহিনী মাঠে নামবে বলে ঘোষণা করা হয়।
এদিকে সরজমিন ঘুরে চাঁদপুর শহরের বিপণী-বিতানগুলোতে কিছুটা ক্রেতা সমগম কম দেখা গেলেও উপজেলা শহরগুলোতে আগের মতো ভীড় অব্যাহত আছে। এমনকি প্রবাসীরাও হারহামেশাই বিপণী-বিতানগুলোতে কেনাকাটা করছে। এছাড়া গ্রামের হাট-বাজারের পরিবেশে যেন উৎসবই বিরাজ করছে।
করোনাভাইরাস থেকে সবার সুরক্ষার জন্য যে হোম কোয়ারেন্টাইন দরকার। তাই বুঝতে পারছে না সাধারণ মানুষ। এমনকি হোম কোয়ারেন্টাইনটাই কি এবং কেন? তা বুঝতেই পারছে না সর্বসাধারণ। ফলে যে যার মতো করে অবাধে চলাফেরা অব্যাহত রাখছে। এ পরিস্থিতিতে এখন জেলাময় আতংক বিরাজ করছে সচেতন মহলের মাঝে।
সচেতন মহল বলছে, এখন সর্বপ্রথম কেবল প্রশাসনের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস রোধে জনসচেতনা প্রয়োজন। সাথে প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিয়ে আসতে হবে হোম কোয়ারেন্টাইনে। সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকেই। তাদের ভূমিকা নিয়েই এখন নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ দাবি করছেন, প্রশাসন কেবল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আর শিক্ষকদের সহায়তায় ইতোমধ্যে কিছু-কিছু প্রবাসীদের অবস্থানের চিত্রের বিষয়ে অবগত হয়েছেন। আর এ কারণেই কেউ কেউ বলছে, এ পর্যন্তই যেন তাদের দায়িত্ব শেষ করে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে প্রশাসন।
এমন পরিস্থিতিতে জেলার ২৬ লাখ মানুষের জীবন কতটা সুরক্ষিত বা করোনা সংক্রমন হতে নিরাপদ তা জানার বা বলার কেউ নেই বললেই চলে। সচেতন মহল বলছে, করোনা প্রতিরোধে চাঁদপুরে জেলা প্রশাসন শহর কিংবা গ্রাম লকডাউন না করলেও জনজীবনের অবাধে চলাফেরা রোধের জন্য দিনের একটা নির্ধারিত সময় কেবল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে অতি দ্রুত।
যাতে করে হাটে-বাজারে কিংবা বিপণী বিতানগুলোতে জনসমাবেশ ধীরে-ধীরে কমে আসে। এছাড়া অপ্রয়োজনে যারা চলাফেরা করছে, তাদের চিহ্নিত করে সতর্কতামূলক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। তাহলে হয়তো জনসমাবেশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। আর এ কাজ কখন শুরু হবে তাই দেখতে চায় সচেতন মহল।