চাঁদপুরে নিত্যপণ্যের লাগামহীন দাম, দিশেহারা জনগণ

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে জনমনে ক্ষোভ

এস এম সোহেল
সাধারণ মানুষের আয়ের সাথে ব্যয়ের হিসাব মিলছে না। লাগামহীন নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়ছে। সাথে বাড়ছে ক্ষোভ। করোনাভাইরাস মহামারির পর পুরো বিশ্বেই স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। তবে এই হার যেন আকাশচুম্বী চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন বাজারে। কিছুদিন পর পর হঠাৎ করেই বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের দাম। ফলে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও। ফলে বড় ধরনের জনঅসন্তোষের আশংকাও করছেন কেউ কেউ। বাজারে চাল, ডাল, সবজি, মাছ ও মাংসসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
এদিকে, এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে কিছুদিন পর-পর বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। কিছুদিন যাবৎ বাজার মনিটরিংয়ের কোন ব্যবস্থাও চাঁদপুরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আগে জেলা মার্কেটিং অফিসের পক্ষ থেকে মাঝে-মধ্যে বাজার মনিটরিং করতে দেখা গেলেও এখন তাদের কার্যক্রম শুধু অফিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে ধারণা করছে মানুষ। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা তো বটেই, পাইকারী ব্যবসায়ীরাও নিজেদের ইচ্ছেমতো দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করছে। আর সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ না করেই বেঁচে থাকতে তা কিনতে বাধ্য হচ্ছে। নীরব প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে মনে-মনে অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছে। তবে কখন বিস্ফোরিত হয়, তা’ বলা মুশকিল।
সাধারণ মানুষ বলছে, বাজারে নানা শাক-সবজিসহ দেশী তরকারির আমাদানি কম নেই। অথচ বাজারে সামান্য শাকের দাম সর্বনিম্ন দাম ৫০ টাকা। এতে করে ক্রয় ক্ষমতা কমে আসছে সাধারণ মানুষের। এমনকি বাজারে এসব কাঁচা মালের দাম কমবে কিনা তার বলতে পারছে না ব্যবসায়ীরা।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে আগে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজের পাশাপাশি ডাল, তেল এবং চিনিও বিক্রি করছে দেখা গেলেও কিছুদিন যাবৎ তাদের দেখা যাচ্ছে না। ফলে চাল, ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আঁদাসহ অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে।
চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে- পেয়াজ, রসুন, আদা, আটা, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, চিনি, সবজি, মাছ, মাংস, ডিমসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বাজারে মোটা চাল ৪৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চাল ৫৮-৬০ টাকায় কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দেশী পেঁয়াজের বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি, ইন্ডিয়ান পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, দেশী রসুন বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকা কেজি, চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা কেজি, দেশী আদা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি, চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি, সয়াবিন তেল ১ লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকা, সয়াবিন তেল ৫ লিটার বিক্রি হচ্ছে ৬৯৫-৭২০ টাকা, সরিষা তেল খোলা ১৭০-১৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, সরিষা তেল ৫ লিটার বিক্রি হচ্ছে ১০২৫ টাকা, মশারী ডাল ৮৫-৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, চিনি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়, তীর ময়দা কেজি ৪০-৪৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ব্রয়লার মুরগী ১৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, সোনালী মুরগি ৩২০ টাকা কেজি, লেয়ার ২৫০ টাকা কেজি, গরুর মাংশ ৬০০ টাকা কেজি, খাসি ৯০০ টাকা কেজি, ডিম ১০৫ টাকা (ডজন), কাচকি মাছ ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি, রুই মিডিয়াম সাইজ ২৮০-৩০০/৩২০ টাকা কেজি, পাবদা ৫০০ কেজি, চিংড়ি ৬০০-৯০০ টাকা কেজি, আলু ১৬ টাকা কেজি, টমেটো ১৩০ টাকা কেজি, পেঁপে ২০-২৫ টাকা কেজি, ডেরশ ৫০ টাকা কেজি, শিম ১০০ টাকা কেজি, পটল ৬০ টাকা কেজি, বেগুন ৫০-৮০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা কেজি, কাঁচা মরিচ ১৪০ টাকা কেজি, মুলা ৬০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৬০ পিচ, পাতাকপি ৫০ পিচ, শশা ৪০ টাকা কেজি, লাউ প্রতিটি ৫০-৬০ টাকা পিস, গাজর ১৪০ টাকা কেজি, লেবু ২০-৩০ হালি, লতি ৫০ টাকা কেজি, বরবটি ৮০ টাকা কেজি, করলা ৫০-৬০ টাকা কেজি।
শহরের পালবাজর ও বিপণীবাগ বাজারের একাধিক ক্রেতা-বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিনে পাইকারী বাজারেই পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আটা, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, চিনি, সবজি, মাছ, মাংস, ডিমসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। পাইকারী বাজারে মূল্যে বৃদ্ধির কারণে খুচরা বাজারে বাড়ছে সবকিছুর দাম।
অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বলে জানান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ইলিয়াস মিয়া। তিনি বলেন, ৩ বছর ধরে প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি, একই বেতনে। অথচ এ সময়ে সংসার খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ পার্সেন্ট। বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ, বাসাভাড়া, চিকিৎসা ব্যয়, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল সবই বেড়েছে সমানতালে। তার ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বর্তমানে আকাশছোঁয়া।
অপরদিকে বলা হয়ে থাকে, মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবোধে ভোগেন। অভাব অনটনে পড়ে তারা অনেক কষ্ট করতে পারেন কিন্তু নিজের সামাজিক অবস্থান নিয়ে আপোষ করেন না। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি মধ্যবিত্তের দীর্ঘদিনের লালিত মর্যাদাবোধেও আঘাত হানতে শুরু করেছে। এমন আশঙ্কা বিরাজ করছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কৃষক-শ্রমিক ও মধ্যবিত্তরাও। আর এ থেকে গণঅসোন্তষ রুপ নিবে গণবিস্ফোরণে- এমনটাই দাবি সর্বসাধারণের।
১২ অক্টোবর, ২০২১।