৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও
কচুয়া ব্যুরো
চাঁদপুরের কয়েকটি গ্রামের অর্ধ শতাধিক যুবকের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে প্রতারকরা। মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুরের পদুয়া গ্রামের প্রবাসী মো. হান্নান মিয়া ও তার ছেলে স্পেন প্রবাসী সুলতান ওরফে রুবেল যুবকদের স্পেন, মাল্টা ও পর্তুগালসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা ঐ টাকা হাতিয়ে নেয়। বৈধভাবে ভিসার মাধ্যমে বিমানে করে স্পেনসহ ইউরোপে বিভিন্ন দেশে নিবে বলে প্রত্যেক যুবক থেকে হাতিয়ে নেয় ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা করে।
প্রতারকরা কন্ট্রাক্ট করে অর্ধ শতাধিক যুবককে প্রথমে নেয় ভারত। ভারত থেকে আলজেরিয়া হয়ে মরোক্কো গিয়ে তারা জানতে পারেন কারোরই হয়নি ভিসা। ওই সময়ে প্রতারকরা বাধ্য করে যুবকদের উত্তাল সাগর নৌকায় পাড়ি দিতে। তখন যুবকরা স্বপ্নের স্পেন যাওয়ার জন্য প্লাস্টিকের নৌকা দিয়ে জীবন বাজি রেখে অবৈধভাবে উত্তাল সাগর পাড়ি জমান। সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। আবার অনেকে বাড়ি ফিরে আসেন।
প্রতারকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করার পাশাপাশি বারবার প্রশাসনের কাছে ধর্ণা দিয়েও টাকা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ উঠেছে- প্রতারকদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত সুলতান ওরফে রুবেল ও তার বাবা হান্নানসহ তাদের পরিবার। যদিও পুলিশ বলছে, প্রতারকদের ধরতে অভিযান চলছে।
জানা যায়, কচুয়া উপজেলার কাদলা ইউনিয়নের দোঘর গ্রামের স্বর্ণকার বাড়ির জিতু মিয়ার ছেলে ইমাম হোসেনকে স্পেন পাঠানোর জন্য দালাল সুলতান ওরফে রুবেল ও তার বাবা হান্নানকে ১৮ লাখ টাকা দেন। ৩ মাস পরে স্পেন নেয়ার উদ্দেশে গত ২৭ জানুয়ারি ইমাম হোসেন বাড়ি ত্যাগ করেন। মৌরিতানিয়া যাওয়ার পর ইমাম হোসেন জানতে পারে তার নামে কোন বৈধ ভিসা নাই। জীবন বাজি রেখে ৯৬ ঘণ্টা শুকনো খাবার খেয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে তাকে স্পেন যেতে হবে। ৫ মাস মৌরিতানিয়া অপেক্ষা করে ইমাম হোসেন গবাদিপশু বিক্রি, জমি বন্ধকসহ সুদে আনা লাখ-লাখ টাকা ঋণের কথা চিন্তা করে গত ২৪ মে রওয়ানা হন স্পেনের উদ্দেশ্যে।
ওইদিন থেকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইমান হোসেন নিখোঁজ রয়েছেন। ইমাম হোসেন ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। ইমাম যাওয়ার পর তার স্ত্রী ৩ সন্তান নিয়ে অসহায় দিনযাপন করছেন।
গত ৩০ আগস্ট ইমাম হোসেনের নিখোঁজ বিষয়ে এলাকার গণ্যমান্য ও সাংবাদিকসহ প্রতারক হান্নান মিয়ার সাথে তার বাড়িতে যোগাযোগ করলে তিনি তার ছেলে দালাল সুলতান ওরফে রুবেলের সাথে যোগাযোগ করে গত ৫ সেপ্টেম্বর মধ্যে ইমাম হোসেনের ১৮ লাখ টাকা ফেরত দিবেন ও ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইমামের খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন বলে উপস্থিত সবার সামনে ভিডিও রেকর্ড বক্তব্যের মাধ্যমে আশ^স্ত করেন।
ইমান হোসেনের পরিবার ৫ সেপ্টেম্বর তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হান্নান মিয়ার বাড়ি মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুরের পদুয়া গ্রামে গিয়ে দেখতে পান- তারা ঘরে তালা ঝুলিয়ে পলাতক রয়েছেন।
এমন অবস্থা ইমাম হোসেনের স্ত্রী তার সন্তানদের নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন। এ বিষয়ে তিনি চাঁদপুরের আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।