চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচন : রাজনীতিতে কী বার্তা দিল

ইলশেপাড় রিপোর্ট
সব জল্পনা আর বির্তকের অবসান ঘটিয়ে শেষ হলো চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফলাফল হয়েছে বলে জেলার রাজনীতি বিশ্লেষকরা দাবি করছেন। তবে সদ্য শেষ হওয়া এই নির্বাচন জেলার রাজনীতিতে কী বার্তা দিল- এ নিয়েই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালচনা চলছে।
জেলা পর্যায়ে স্থানীয় রাজনীতির অভ্যন্তরীণ যারা কম-বেশি খবর রাখেন, এমন মহলের দাবি দলীয় রাজনীতিতে বিভাজন রাখা কতটা সমীচিন না তার প্রমাণ রাখলো এই জেলা পরিষদ নির্বাচন। পাশাপাশি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এমনটাই প্রমাণ করলেন এক সময়ের আলোচিত এই আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ আলহাজ ওচমান গনি পাটওয়ারী। রাজনীতিতে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটা, তিনি তা ভোটের রাজনীতি দিয়েই জানান দিলেন।
রাজনীতিতে যে মেধা ও কৌশল রাখতে হয় তা একাধিকবার প্রমাণ করছেন চাঁদপুরের এই বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ। যদিও তিনি বর্তমানে জেলার রাজনীতিতে প্রায় এক দশকের কম-বেশি সময় ধরে আর সক্রিয় হতে পারছেন না অভ্যন্তরীণ দলীয় রাজনীতির কারণে। কারণ হিসেবে তার সমর্থকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় যে দলের জন্য ব্যাপক অবদান রাখছেন, সে দলই সময়মতো তার মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয়নি।
এজন্য তিনি স্বতন্ত্রভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে প্রমাণ করলেন রাজনীতিতে এখনো শেষ হয়ে যাননি। তার সমর্থক মহলের আক্ষেপ হয়তোবা কোন মহলের আস্থাভাজন হতে পারেনি এই পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ।
ওচমান গনি পাটওয়ারীর এই টানা এই জয় আগামি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির জন্য একটি নতুন বার্তাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। কেউ কেউ বলছে, রাজনীতিতে শেষ বলে যেমন কোন কথা নেই, তেমনি হয়তো দলীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আবার আগামির রাজনীতিতে তিনি মূল্যায়িত হবেন। এজন্য বিভাজনে রাজনীতি যারা করেন তাদের আরো উদারতার প্রমাণ রাখারও দাবি তাদের।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সদ্যসমাপ্ত জেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ বহু রাজনীতির মুখোমুখি হতে হয়েছে এই নেতার। ২০১৬ সালে যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে হয়েছে। ২০২২ সালে এসে স্রোতের বিপরীতে নৌকা না থাকলে মোকাবেলা করতে হয়ে আর্থিক প্রভাবশালী ধনকুবের মুখোমুখি। যদিও চাউর ছিলো বিকল্প প্রার্থী হেভিওয়েট নয়। তারপরও এমন প্রার্থীকে নিয়েই রাজনীতির অন্দরমহলে চলছিলো নানা সমীকরণ।
সব সমীকরণকে ব্যর্থ করে দিয়েছে জনপ্রতিনিধিরা। যদিও জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই ছিলো সেইসব সমীকরণকারীদের সমর্থক। কিন্তু তারা বিকল্প প্রার্থীর প্রতি আস্থা রাখতে পারেননি। দেশের আগামি দিনের রাজনীতিতে অনেকটাই কঠিন হবে তা এখন তৃণমূল পর্যায়ের সবাই কমবেশি জানে। যার কারণে নিজদের অভ্যন্তরীণ বিভেদ যত কমিয়ে আনা যায় ততোই মঙ্গল- এমন বার্তা দিলেন ভোটের মাধ্যমে তারা।
চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল এখন জেলা আওয়ামী লীগের সাথে জেলা বিএনপিও বিশ্লেষণ করছে। আওয়ামী লীগের একটি অংশ মনে করছে, প্রত্যাশিত ফলাফল হয়েছে। ভোটের মাঠে নৌকা না থাকলেও নৌকার স্বপক্ষেই ফলাফল এসেছে। নির্বাচনে অংশ না নেওয়া জেলা বিএনপি মনে করছে, এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা যেহেতু হয় না সে কারণে কে অংশ নিল আর কে জয়লাভ করল এটা বিএনপির জন্য কোন চিন্তার বিষয় না।
তবে দলটির একাংশ বলছে, আগামি দিনের রাজনীতি জেলা আওয়ামী লীগের এই বিভাজনের রাজনীতি তাদের জন্য আশীর্বাদ হবে। পাশাপাশি নিজদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে নেয়ার জন্য পরিস্কার বার্তাও বহন করে।
দলীয় ঐক্যবদ্ধতার মাধ্যমে যেমন জনগণের ভোটাধিকার ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা যাবে। তেমনি এ নির্বাচন জয়ের মধ্যে দিয়ে ওচমান গনি পাটওয়ারী প্রমাণ করলেন দল না চাইলেও সাধারণ মানুষের সমর্থন এবং যাদের নিয়ে তিনি রাজনীতি করছেন এক সময় তাদের প্রতি কমিটমেন্ট থাকলে স্বতন্ত্রভাবেই জয়লাভ করা সম্ভব।
এমন পরিস্থিতিতে আলহাজ ওচমান গনি পাটওয়াররি জয়লাভ চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের জন্য এখন অনেকটাই অস্বস্তির। বিপরীতে জেলা বিএনপির জন্য নিজদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরিস্কার বার্তাই বলে মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

২০ অক্টোবর, ২০২২।