মানিক দাস
চাঁদপুরের নদীতে জেলেদের মহোৎসব চলছে। মা ইলিশ রক্ষার মৌসুমে অর্থাৎ অভয়াশ্রম চলাকালে জেলেরা নদীতে নামতে না পারায় এখন অভিযান শেষ হওয়ায় নদীতে যেন নৌকা নিয়ে জেলেদের ইলিশ ধরার উৎসব চলছে। গত বুধবার সকালে ও বিকেলে বড় স্টেশন মোলহেডে গিয়ে দেখা যায়, মোলহেড থেকে প্রায় ১ গজ দূরে শত শত জেলে নৌকা নিয়ে ইলিশ আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
চাঁদপুরের নদীতে চোখ ঘুরালে কেবল দেখা যায়, পদ্মা-মেঘনায় শুধুই নৌকা। দিবারাত্রি জেলেরা নৌকা নিয়ে ইলিশ আহরণে ব্যস্ত। গত ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত সরকার ঘোষিত ২২ দিনের অভয়াশ্রমে মা ইলিশ রক্ষায় সকল প্রকার জাল নদীতে ফেলা নিষিদ্ধ ছিল। এই নিষিদ্ধের মধ্যে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে শুরু করে লক্ষ্মীপুর জেলার চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত প্রায় ১শ’ কিলোমিটার নদী এলাকা অভয়াশ্রমের আওতায় এনেছিল সরকার। এই ১শ’ কিলোমিটারের মধ্যে কোন প্রকার জাল নদীতে ফেলা নিষিদ্ধ ছিল।
চাঁদপুর জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার ১শ ৯০ জন। এর মধ্য থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সরকারের সুবিধা ভোগ করেও কিছু অসাধু জেলেরা প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে মা ইলিশ নিধন করেছে। ২২ দিনের অভিযানে চাঁদপুর জেলা টাস্কফোর্স প্রায় দেড় শতাধিক জেলেকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে। অনেক মাছ জব্দ করা হয়েছে। অনেক নৌকা ফুটো করে নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার কিছু নৌকা প্রশাসনের আওতায় এনে নিজস্ব জিম্মায় রেখেছে। কয়েক লাখ মিটার জালও উদ্ধার করেছে। এখন অভয়াশ্রমের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় জেলেদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। একই সাথে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ ঘাটে মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মাঝেও আনন্দ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
জেলেরা অভয়াশ্রম অভিযান শেষ হওয়ায় জাল নিয়ে তারা দিবারাত্রি পদ্মা মেঘনায় এবং এ নদীর শাখাগুলোতে প্রবেশ করে ইলিশ আহরণ করছে। যার দৃশ্য বড় স্টেশন মোলহেডে গেলেই চোখে পড়ে। এইসব জেলেরা মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে জাল নৌকা সংগ্রহ করে মাছের আশায় নদীতে নামছে। আর যাদের কাছ থেকে জেলেরা দাদন নিয়েছে তারা মাছ ধরে ওই ব্যবসায়ীকে দিতে হচ্ছে। বড় স্টেশনে মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা রূপালী ইলিশ পেয়ে অনেকটাই খুশি। এই ঘাটে যেসব ইলিশ আমদানী রপ্তানী করা হচ্ছে এগুলো চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনার মাছ বলেই ব্যবসায়ীরা জানান।
তারা আরও জানান, অভিযান চলাকালে সমুদ্র এলাকায় যেসব মাছ আহরণ করা হয়েছে ওই সব এখনো চাঁদপুর মাছ ঘাটে আসেনি। তবে দু’চারদিনের মধ্যেই ওইসব এই ঘাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে জেলেরা নিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হয়েছে। ২২ দিনের অভিযানে সমুদ্র এলাকায় যেসব জেলেরা মাছ আহরণ করেছে বরফের সংকটে অনেক মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। ওই মাছ লবণ মাখা ছাড়া কোন কাজেই লাগবে না।
চাঁদপুর মাছ ঘাটে গতকাল ঘুরে দেখা যায়, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ৫শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। যার প্রতি মণ ২০ হাজার টাকা। ৭/৮শ’ গ্রামের ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি করা হয় ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকায়। এর প্রতি মণ ২৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। ১ কেজি ও তার উর্ধ্বের মাছ কেজি প্রতি বিক্রি করা হচ্ছে ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকায়। যার মণ প্রায় ৩২ হাজার টাকা। এছাড়া ২/৩টি মাছে ১ কেজি পরিমাণ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২শ’ ৭০ থেকে ৩শ’ টাকায়। যার মণ ১২ হাজার টাকা।
বর্তমানে চাঁদপুরের মানুষ ইলিশের দাম কিছুটা নাগালের মধ্যে থাকায় অভিযানের পর থেকে প্রতিনিয়তই চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ ঘাটে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এছাড়া বিভিন্ন মৎস্য ব্যবসায়ীরা রিক্সা ভ্যানযোগে পাড়া মহল্লায় গিয়ে একইভাবে ইলিশ মাছ বিক্রি করেছে।
