ইলশেপাড় রিপোর্ট
গত ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চাঁদপুর মেঘনা-পদ্মায় মা ইলিশ রক্ষায় জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করছে সর্বজন। জাতীয় সম্পদ রক্ষায় সরকার প্রতিবছর নদীতে মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় অভায়শ্রমসহ সব ধরনের মাছ ধরার নিষিদ্ধ করে সরকার। এসময় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন ব্যাপক তৎপরতার মাধ্যমে জেলেদের জীবন্নয়নসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে হয়।
চলতি বছর মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ও তার প্রশাসনের উদ্যোগ ছিলো দেখার মতো। প্রথমবারের মতো চাঁদপুরের নারী জেলা প্রশাসক তার ব্যক্তিগত কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে মা ইলিশ রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখায় সংশ্লিষ্টরা আশা করছে এ বছর ইলিশ উৎপাদন বাড়বে।
জেলা প্রশাসন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে জেলেদের হালনাগাদ প্রকৃত জেলেদের তালিকা করে ৪৪ হাজার ৩৫ জন জেলেকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে তাদের পরিবারকে সার্বিক সহোযোগিতা করে। পাশাপাশি দুঃস্থ ও অসহায় জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আওতায় আনাসহ প্রশিক্ষণ ভাতা প্রদান করেন।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জাতীয় সম্পদ রক্ষায় সরাসরি তদারকি করেন। যার কারণে জেলা টাস্কফোর্স, কোস্টগার্ড, মৎস্য অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবক টিম, গ্রাম পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নদীতে সার্বক্ষণিক নজরদারীসহ অভিযান অব্যাহত রাখায় আগের যে কোন সময়ের তুলনায় সাফল্যের মাত্রা বেশি ছিলো।
যার কারণে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর ও মাছ ধরার জেলে এবং মৎস্যজীবীরা আশা করছেন এবার ইলিশ উৎপাদন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি হবে। তাছাড়া এবারের প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিলো অনেকটাই ইলিশ উৎপাদনের অনুকূলে। যার কারণে সংশ্লিষ্ট সবাই আশাবাদী এবার ইলিশ উৎপাদন অতীত রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। যা সম্ভব হচ্ছে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের কারণে।
ইতোমধ্যে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান শেষ হওয়ায় জেলারা মাছ ধরার জন্য গত সোমবার রাত ১২টার পর থেকে নদীতে নামছে। প্রশাসনের অভিযানে মা ইলিশ রক্ষা জেলা প্রশাসন ও টাস্কফোর্সে মাছ শিকারের অভিযোগে প্রায় ৮শ’ জেলেকে আটক ও পরে তাদের মধ্যে ২শ’ ১৮ জনকে ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে।
পাশাপাশি প্রশাসনের এই অভিযানে ১ লাখ ১১ হাজার ৯শ’ ৫০ কেজি মা ইলিশ ও ১০ কোটি ৭ লাখ ২শ’ ১৯ মিটার কারেন্ট জালসহ ২শ’ ৬৮টি নৌকা জব্দ করে টাস্কফোর্স। ইলিশ রক্ষার জন্য ২শ’ ৭১টি অভিযানে ৯২টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শেষে ১শ’ ৮টি মামলা দায়ের করে। মামলায় ৯ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। জব্দকৃত মা ইলিশ নিলামে বিক্রয় করে ১ লাখ ৯ হাজার ৫০ টাকা রাজস্ব আয় দেখায় চাঁদপুর জেলা মৎস্য দপ্তর।
এবারে জেলা প্রশাসন বেশি তৎপর ছিলো নদী তীরবর্তী হরিণা, আখনের হাট, দোকানঘর, বহরিয়া, আলুর বাজার, আনন্দ বাজার, কোড়ালিয়া নদীর পাড়, টিলাবাড়ি, পুরানবাজার হরিসভা, নন্দীগো দোকান, চান্দ্রা নদীর পাড়, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো। যার কারণে জেলেরা মা ইলিশ শিকারের উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসন এই অভিযান অব্যাহত রাখে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল হতে হাইমচরের চরভৈরবীর মেঘনা নদীর ৮০ কিলোমিটার এলাকায়। বিস্তীর্ণ এই এরিয়াগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারী রাখা ছিলো যদিও অনেকটা কষ্টসাধ্য। তারপরও জেলা প্রশাসকের নীবিড় তৎপরতায় সফলতা ছিলো সন্তোষজনক।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ইলশ্পোড়কে জানান, চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় ১শ’ কিলোমিটার নদীপথ দিন-রাত পাহারা দেয়া সংশ্লিষ্টদের জন্য ছিলো অনেকটাই কষ্টকর। তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করায় মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের সাফল্য অতীতের তুলানায় এবার অনেকটাই বেশি হয়েছে বলে প্রশাসন আশাবাদ ব্যক্ত করে।
২৭ অক্টোবর, ২০২১।