চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যাত্রী হয়রানি চরমে

ইজারাদার রুটি বিক্রেতা থেকে কোটিপতি

ইল্শেপাড় রিপোর্ট
চাঁদপুর লঞ্চঘাটে সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি এখন যেন নিয়মেই পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাগ, বস্তা, মাছের ককসীটের প্যাকেট বা যে কোন মাল বহন করলেই ইজারাদারদের শ্রমিকদের হাতে যাত্রীরা লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে হারহামেশেই। এ যেন দেখার কেউ নেই। বিআইডব্লিউটিএ’র অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দিনের পর দিন এমন হেনেস্তা করে আসছে ইজারাদারদের লোকজন। ফলে লোক-লজ্জার ভয়ে অনেকেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের চাহিদামতো টাকা দিয়ে নিজদের রক্ষা করছেন ভুক্তভোগীরা।
এমন পরিস্থিতিতে শীতের শুরুতেই যেসব পর্যটক চাঁদপুর ভ্রমণে আসছেন, তারা খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পরছেন প্রতিদিনই। তাদের কাছে চাঁদপুর জেলার ইমেজ ও প্রশাসনের ভাবমূর্তি নিয়েও এখন নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে বলে অনেকেই জানিয়েছে। বিশেষ করে ভ্রমণ পিপাসুরা প্রায় নৌ-ভ্রমণে চাঁদপুর আসেন তাজা ইলিশ মাছের স্বাদ গ্রহণ করতে। তারা যাওয়ার সময় ককসীটের প্যাকেট করে পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুমহলের জন্য চাঁদপুরে বিখ্যাত ইলিশ মাছ নিয়ে যান। কিন্তু তারা যখন লঞ্চঘাটে আসেন তখনই বাঁধে বিপত্তি।
এ সময়ে ইজারাদারের লোকজন কোন নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছামতো প্যাকেট প্রতি টাকা দাবি করে থাকেন। চাহিদা মতো টাকা না দিলে যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণসহ প্রকাশ্য দিবালোকে মালের প্যাকেট নিয়ে টানাহেচড়া করতে থাকেন। এতে করে অনেকেই লাঞ্ছিত হন। আবার কেউ কেউ লোকলজ্জার ভয়ে তাদের চাহিদামতো অর্থ দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন অবৈধ এই অর্থ সংগ্রহের কাজ করে থাকেন ইজারাদারের দালাল জয়নাল বেপারী।
লঞ্চঘাটে ইজারাদারদের এমন আচরণ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও জেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ কিংবা বিআইডব্লিউটিএ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দিন-দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। এমন পরিস্থিতির শিকার শহরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। এমনকি তাদের নাজেহাল থেকে গণমাধ্যমকর্মীরাও বাদ যাচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে চাঁদপুর সম্পর্কে পর্যটকসহ ভ্রমণ পিপাসু সৌখিন মানুষের কাছে ভুল বার্তা ছড়িয়ে পড়বে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে।
এদিকে ইজাদারদের এমন আচরণের কারণ জানতে গিয়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্থানীয়রা বলছে, লঞ্চঘাটে ইজারাদার হচ্ছেন হাজি আব্দুল মালেক বেপারী। তিনি কয়েক বছর আগেও ছিলেন এই ঘাটের একজন সামান্য রুটি বিক্রেতা। আর এখন তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক। গড়ে তুলেছেন নামে-বেনামে ব্যাপক সম্পদ। আর তার এমন অর্থের গরমেই এখন তার সম্পর্কে কেউ কথা বলার সাহস করছেন না। ফলে তার শ্রমিকরা গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকটাই গর্বের সাথেই দাবি করেন, ৬০ লাখ টাকায় ইজারা এনেছি। তাই যেভাবে খুশি সেভাবেই টাকা তুলবো, কার কি আসে যায়।
তবে লঞ্চঘাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, লঞ্চঘাটের বিআইডব্লিউটিএ’র ক্যান্টিনটির মালিক হচ্ছেন এই কথিত ইজারাদার হাজি আব্দুল মালেক বেপারী। তিনি বিআইডব্লিউটিএ’র অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাত করেই নামে-বেনামে লঞ্চঘাটের অধিকাংশ স্থাপনাই অবৈধভাবে লিজ নেন। যার কারণে তিনি প্রতি মাসেই মোটা অংকের ভাড়া আদায় করে আসছেন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
তবে তার বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ’র অভিযোগ রয়েছে, তাদের নির্দেশনা না মেনে তিনি নদীর উপর অবৈধভাবে বেশ কিছু স্থাপনা তুলেন ও বর্তমানে অবৈধ দখলে আছেন।
লঞ্চঘাটের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব স্থাপনা অবৈধভাবে লিজ বা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে ইজারদার আব্দুল মালেক বেপারী বিআইডব্লিউটিএ’র চাঁদপুর অফিসই নয়, ঢাকা অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও ম্যানেজ করে নিয়েছেন। ফলে তার অনিয়মের দৌরাত্ম্যের সীমা অতীতের যে কোন সময়কেই ছাড়িয়ে গেছে। এতে করে তার শ্রমিকদের দ্বারা সাধারণ মানুষ থেকে ভিআইপি কেউ রক্ষা পাচ্ছে না হয়রানি কিংবা লাঞ্ছিত হওয়া থেকে।
এই পরিস্থিতিতে চাঁদপুর জেলার ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তেমনি সাধারণ মানুষ সামান্য মাল কিংবা নিত্যপণ্যের যে কোন প্যাকেট নিয়ে ঘাটে আসলেই ভয়ে থাকেন, কখন হচ্ছে শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিত। কিংবা নিয়নীতির বাহিরে চাহিদার বিপরীতে নিজ পকেটের সর্বশান্তের।
এদিকে ঘাট ইজারাদার আব্দুল মালেক বেপারী অতি সম্প্রতি মা-ইলিশ রক্ষা মৌসুমে তার ক্যান্টিনে অবৈধভাবে ইলিশ মাছ বিক্রি করে। বিষয়টি শহরে চাউর হলে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ অভিযানে শাস্তি হিসেবে ঐ মাছ মাথায় ঢালা হয়। এ নিয়ে পুরো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ইজারাদারদের হাত থেকে লঞ্চঘাটকে রক্ষা ও নির্ধারিত মূল্য তালিকার মাধ্যমে টাকা আদায় করা হলে হয়রানি যেমন বন্ধ হবে, তেমনি ‘ইলিশের বাড়ি’ খ্যাত চাঁদপুর জেলার ভাবমূর্তি রক্ষা করা সম্ভব হবে। এজন্য ইজারাদারের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
১৯ নভেম্বর, ২০২০।