ইল্শেপাড় রিপোর্ট
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চাঁদপুর-২ (মতলব দক্ষিণ-উত্তর) আসনে তেমন নির্বাচনী হাওয়া বইছে না। নির্বাচনী সময় কাছে আসলে নির্বাচনী উত্তাপ বৃদ্ধি পাবে বলে ভোটাররা দাবি করছেন। তবে সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনায় বর্তমান সংসদ সদস্য ও সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম। তিনি নিয়মিত নিজ এলাকায় চষে বেড়ালেও প্রতিপক্ষ বিএনপিতে এখনো নেই কোন নির্বাচনী আমেজ। ফলে মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার সর্বত্র’ই একটাই কথা- ‘মায়া চৌধুরীর বিকল্প নাই।’
যার প্রমাণ গত ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে মতলব উত্তর উপজেলার ছেঙ্গারচর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জনসভা। ঐদিন লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছিলো জনসভাস্থল। ঐ জনসভায় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও সাধারণ জনগণের স্রােতও ছিলো অঢেল। তারা তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে দেখতে এসেছেন, এসেছিলেন উন্নয়নের রুপকার ‘মায়া চৌধুরী’কে দেখতে।
চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-দক্ষিণ) সংসদীয় আসনে নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুয়ায়ী মোট ভোটার ৩ লাখ ৮২ হাজার ৮শ’ ৩৯ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫শ’ ১৫ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩শ’ ২৮ জন।
চাঁদপুর-২ আসনের রাজনীতির মাঠে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম জয়লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে দলটির নেতাকর্মীরা তিনি মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকায় পুরো মতলবের রাজনৈতিক অধিপত্য একেবারে নিজের করে নেন। এছাড়া তিনি মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার উন্নয়নে নানা ধরনের কাজ করেন। বিশেষ করে তাঁর একান্ত উদ্যোগে নির্মিত ‘মতলব সেতু’র কাজ শেষ হওয়ায় মতলব উত্তর-দক্ষিণসহ পুরো জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় দারুণ দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এছাড়া সপ্তাহের অন্তত ৩ থেকে ৪ দিন নিজ এলাকায় অবস্থান করে উন্নয়ন কর্মকা-ের নিয়মিত খোঁজ নেন ত্রাণমন্ত্রী মায়া চৌধুরী।
এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এম. রফিকুল ইসলাম বয়সের ভারে অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় তার নির্বাচন করার সম্ভাবনা না থাকলেও কেউ-কেউ তাকে আবারো প্রার্থী হিসেবেই দেখছেন।
তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে বা ভোটের রাজনীতিতে আসতে বেশ কয়েকজন নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য প্রাক প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকা ও চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নানা ধর্মীয় ও জাতীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন। তারা হলেন- ঢাকাস্থ আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. নূরুল আমিন রুহুল এবং আহসান গ্রুপের পরিচালক ও তরুণ নেতা এম ইসফাক আহসান। এর মধ্যে ইসফাক আহসান এলাকার লোকজন ও নেতা-কর্মীদের সাথে নানাভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। বিশেষ করে তিনি ঢাকা ও চাঁদপুরে এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঝে-মধ্যে মতবিনিময় করছেন। তারা আশায় আছেন- কোন কারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম নির্বাচন না করলে অথবা আওয়ামী লীগ যদি কোন কারণে তাঁকে মনোনয়ন না দেয় তাহলে তারা প্রার্থী হবেন।
অপরদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- কেন্দ্রিয় নেতা ড. জালাল আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, সাবেক কেন্দ্রিয় ছাত্রদল নেতা মোস্তফা খান সফরী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহ্বায়ক ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ শুক্কুর পাটওয়ারী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রিয় সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার ওবায়েদুর রহমান টিপু ও সাবেক সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী মরহুম নূরুল হুদার ছেলে তানভীর হুদা।
অপরদিকে চাঁদপুর-২ আসনে বিএনপিতে এখনো উত্তাপ না থাকলেও প্রস্তুতি চলছে কিছুটা ঢিলে-ডালাভাবে। দলটি এখানে শাসক দলীয় নেতাকর্মীদের রোষাণলে পরে রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই দুর্বল। এছাড়া সাবেক সংসদ নুরুল হুদার মৃত্যুতে বিএনপি অনেকটাই অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে এ আসনে। তবে সরকারি দলের নানা বাঁধা পেরিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে জানান দিয়ে যাচ্ছেন বলে দলটির নেতাকর্মীরা জানিয়েছে।
বর্তমানে দলীয় মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন- দলের কেন্দ্রিয় নেতা ড. জালাল আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী ও সাবেক কেন্দ্রিয় ছাত্রদল নেতা মোস্তফা খান সফরী। তবে বাকিরাও পিছিয়ে নেই। তারাও নিজেদের জানান দিতে কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দৌঁড়-ঝাপ অব্যাহত রাখছেন।
চাঁদপুর-২ আসনে আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী- জেলা জাপা’র আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান খান ও জাপা নেতা এমরান হোসেনের নাম শোনা গেলেও বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কোন নেতার নাম এখনো শোনা যাচ্ছে না।



