দর্জি কারিগর সোহেল রানাকে হত্যায় আদালতে স্বীকারোক্তি

পরকীয়া প্রেম ও আর্থিক লেনদেনের জের

মতলব উত্তর ব্যুরো
মতলব উত্তর উপজেলার পূর্ব ষাটনল গ্রামে দর্জি কারিগর সোহেল রানা খুন হয়। খুনের প্রকৃত তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে ফুফাতো ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে পরকীয়া ও আর্থিক লেনদেনের জেড় ধরেই তার মামাতো ভাই সোহেলকে হত্যা করে। প্রতিবেশী সিদ্দিক বকাউল ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন। ক্লুলেস মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিদ্দিক বকাউলের নাম চলে আসে, তাকে মুন্সিগঞ্জ থেকে আটক করে পুলিশ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সিদ্দিক ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। গতকাল রোববার চাঁদপুর আদালতে সোহেল রানা হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় সে।
এ ঘটনায় মৃত সোহেল রানার মা রোকেয়া বেগম থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে মতলব উত্তর থানার মামলা (নং-০২, তারিখ- ০২/০৪/২০২২ইং, ধারা-৩০২/ ২০১/৩৪ পেনাল কোড) রুজু করা হয়। এর প্রেক্ষিতে তদন্তে নামে মতলব উত্তর থানা পুলিশ। অবশেষে ওই হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। এ নিয়ে রোববার সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিং করেন ওসি মুহাম্মদ শাহজাহান কামাল।
তিনি বলেন, মতলব উত্তর থানা পুলিশ কর্তৃক খুন মামলার আসামি গ্রেফতার ও আসামির দোষ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। গত ২ এপ্রিল উপজেলার পূর্ব ষাটনল (মেহারুল্লাহ প্রধানিয়া কান্দি, পাঠানবাড়ী) গ্রামের রোকেয়া বেগমের বসতবাড়ির পশ্চিম পাশে খালপাড়ে কবরস্থান সংলগ্ন পূর্ব পাশে ধানি জমিতে ঐ গ্রামের সোহেল রানা (২৮) এর মৃতদেহ চোখে ও মাথায় জখমসহ পড়ে আছে মর্মে খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। পরে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চাঁদপুর সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়।
পরবর্তীতে পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মঈনুল হোসেন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) মো. ইয়াসির আরাফাত, মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ আমি মুহাম্মদ শাহজাহান কামাল, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাসুদ ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. মোবারক আলী খুনের মামলার রহস্য উদঘাটন, আসামিদের সনাক্ত ও গ্রেফতারের তদন্তে নেমে পড়ি।
তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারি যে, ঐ হত্যাকান্ডটি পরকীয়া প্রেম ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে বিরোধের কারণে সংঘঠিত হয়। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ আসামি মো. মাসুদ রানা ও তার স্ত্রী মোসা. সুফিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। পরবর্তীতে গত ৯ এপ্রিল অভিযান পরিচালনা করে মুন্সিগঞ্জ থেকে আসামি মো. সিদ্দিক বকাউলকে গ্রেফতার করে। আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হলে সে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারামতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে যে, ভিকটিম মৃত সোহেল ও আটক আসামি মাসুদ পরষ্পর ফুফাতো-মামাতো ভাই হয়। ভিকটিম সোহেলের সাথে মাসুদের স্ত্রী সুফিয়ার পরকীয়া সম্পর্ক ছিল এবং আসামি সিদ্দিকের সাথে জায়গা-জমি বায়না টাকা নিয়া আগে থেকে বিরোধ চলিয়া আসছিল। এই দুই বিরোধের জের ধরে আসামি মাসুদ, তার স্ত্রী সুফিয়া ও আসামি সিদ্দিক ভাড়াটিয়া খুনীর মাধ্যমে সোহেলকে খুন করে লাশ গুম করবার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন আসামি মাসুদ, তার স্ত্রী সুফিয়া ভিকটিম সোহেল রানাকে ঘটনাস্থলে ডেকে আনে এবং আসামি সিদ্দিক বকাউল কর্তৃক ভাড়াটে তিনজন খুনির সহায়তায় ভিকটিম সোহেলকে সিদ্দিক বকাউল ভিকটিমের গামছা দিয়া মুখ বাঁধে এবং হাত চেপে ধরে। আসামি মাসুদ লোহার রড দিয়া মাথার পিছনে আঘাত করে খুন করে। তার লাশ শিয়ালে খেয়ে বিনষ্ট করেছে মর্মে প্রচার পাওয়ার লক্ষ্যে আসামি সুফিয়ার পরিকল্পনা মোতাবেক সব আসামিরা ভিকটিমের চোখ ব্লেড দিয়ে উপড়াইয়া ফেলে এবং গুম করার উদ্দেশে মামলার ঘটনাস্থলে তথা ভিকটিমের পারিবারিক কবরস্থানের পাশে ধানি জমিতে ফেলে রাখে।

১১ এপ্রিল, ২০২২।