হাজীগঞ্জ ব্যুরো
সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ, হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হাজীগঞ্জে একজনের মৃত্যু, পুলিশ ও সাংবাদিক, ছাত্র-জনতাসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত এবং পৌরসভাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ৬টি গাড়ি, বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পুড়ে যায়।
এছাড়া পৌরসভার বেশ কয়েকটি গাড়িসহ যাত্রী ও মালবাহী যানবাহন এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়েছে। গত রোববার বেলা ৩টার দিকে পৌরসভা এলাকায় কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি মোটরসাইকেল, পৌরসভা কার্যালয়ে তিনটি গাড়ি ও চারটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে পৌরভবনে আটকা পড়েন মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
পরে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও আটকেপড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্ধার করেন। এর মধ্যে রোববার বিকালে পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা হিমেলের পিতা আজাদ সরকারকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে এদিন রাতে তিনি কুমিল্লা একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দেয় বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীরা।
এরপর রোববার রাতে ও সোমবার সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুঠপাট করে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের দোকানঘর রয়েছে। এছাড়া সোমবার সকালে আবারো পৌরসভা কার্যালয়ে আগুন এবং কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে জনসাধারণের সেবাস্থল হাজীগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়কে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে।
এর আগে রোববার সকাল ১১টার দিকে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজ ও হাজীগঞ্জ বাজারস্থ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের সামনে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীর জড়ো হয়। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ও সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। যে সংঘর্ষ চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এর মধ্যে রোববার বিকালে পৌরসভায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়।
এদিকে সোমবার (৫ আগস্ট) বেলা দুইটি পর্যন্ত পৌরসভা কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এদিন সকালে আলীগঞ্জে বিএনপির কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয় এবং ভাংচুর করে। দুই দিনের হামলা ও সংঘর্ষে পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, ফায়ারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মী, পথচারীসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
এদিন সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা টহল দিয়েছেন। তবে সিএনজি, অটোরিকশা, মিশুকসহ ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করছে। বন্ধ ছিল সবধরনের বড় যানবাহন। বেলা তিনটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এরপর থেকে ছাত্র-জনতা ও বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীরা বিজয় উল্লাস শুরু করেন।
সবশেষ পরিস্থিতির বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।
০৬ আগস্ট, ২০২৪।