নেসলের বেশিরভাগ খাদ্য-পানীয় অস্বাস্থ্যকর

গোপন নথিতে স্বীকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্যদ্রব্য প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানি নেসলে একটি গোপন নথিতে স্বীকার করেছে তাদের উৎপাদিত ৬০ শতাংশের বেশি খাদ্য ও পানীয় ‘সু-স্বাস্থ্যের স্বীকৃত সংজ্ঞা’র মানদণ্ড পূরণ করে না। এছাড়া যতই মান উন্নয়নের চেষ্টা করা হোক না কেন- কিছু কিছু পণ্য কখনোই স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে না।
নেসলের অভ্যন্তরীণ গোপন এই নথি চলতি বছরে কোম্পানিটির শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস নেসলের অভ্যন্তরীণ এই গোপন নথি দেখতে পেয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার হেলথ স্টার রেটিং সিস্টেম অনুযায়ী, পোষ্যপ্রাণীর এবং বিশেষায়িত পুষ্টিকর মেডিক্যাল খাবার ছাড়া নেসলের অন্যান্য খাদ্য ও পানীয় সামগ্রীর মাত্র ৩৭ শতাংশ পণ্য ৩ দশমিক ৫-এর ওপরে রেটিং পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার এই রেটিং সিস্টেমে স্বাস্থ্যকর খাবারের মানদণ্ড নির্ধারণে ৫ এর মধ্যে স্কোর দেওয়া হয়। অ্যাকসেস টু নিউট্রিশন ফাউন্ডেশনের মতো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও পানীয়র গবেষণা কাজে অস্ট্রেলিয়ার এই রেটিং ব্যবহার করে।
শিশুদের জনপ্রিয় কিটক্যাটস, ম্যাগি নুডলস এবং নেসক্যাফের প্রস্তুতকারক এই কোম্পানি অস্ট্রেলিয়ার হেলথ স্টার রেটিং সিস্টেমের সাড়ে তিন রেটিংকে সু-স্বাস্থ্যের স্বীকৃত সংজ্ঞার মানদণ্ডের ‘প্রান্তিক স্তর’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
খাদ্য ও পানীয়র পোর্টফোলিওতে নেসলের প্রায় ৭০ শতাংশ খাদ্যপণ্য ওই প্রান্তিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে নথিতে বলা হয়েছে। খাঁটি কফি ছাড়া ৯৬ শতাংশ পানীয় এবং ৯৯ শতাংশ মিষ্টিজাতীয় খাবার এবং আইসক্রিম এই মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি।
তবে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এই বহুজাতিক কোম্পানির পানি এবং দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য অন্য পণ্যের তুলনায় ভালো স্কোর পেয়েছে। নেসলের পানির ৮২ শতাংশ এবং দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যের ৬০ শতাংশ সু-স্বাস্থ্যের স্বীকৃত সংজ্ঞার মানদণ্ড উতড়ে গেছে।
কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীদের দেওয়া প্রেজেন্টেশনে বলা হয়েছে, আমাদের পণ্যগুলোর মানের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে… তবে আমাদের পোর্টফোলিও এখনও কোম্পানির বাইরের স্বাস্থ্যকর খাবারের সংজ্ঞার মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। এর ফলে আমাদের খাদ্য ও পানীয়র ওপর বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্থূলতা মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রচারের জন্য যখন বিশ্বজুড়ে লড়াই চলছে, তখন খাবারের মানের বিষয়ে নেসলের এই তথ্য কোম্পানিটির জন্য এক ধরনের ধাক্কা হিসেবে এসেছে। নেসলের নির্বাহীরা তাদের খাদ্য ও পানীয়তে পুষ্টির বিষয়ে নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভাবনা শুরু করেছেন; যা চলতি বছরে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া সুইস এই কোম্পানি অভ্যন্তরীণ পুষ্টি মানদণ্ডও হালনাগাদ করতে শুরু করেছে। নিজেদের খাদ্য ও পানীয় সামগ্রীর পুষ্টিমান নিশ্চিতে কোম্পানির সাবেক প্রধান নির্বাহী পিটার ব্রাবেক-লেটম্যাথ নেসলে নিউট্রিশনাল ফাউন্ডেশন চালু করেছিলেন। সাবেক এই প্রধান নির্বাহী নেসলেকে পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর কোম্পানি হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
নেসলে বলেছে, তাদের প্রধান পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নীতি নিয়ে কোম্পানির একটি প্রকল্পে বৃহৎ পরিসরে কার্যক্রম চলছে। এই প্রকল্প শেষে নতুন করে পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং পানীয়র মানদণ্ড হালনাগাদ করা হবে। মানুষের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের পণ্য পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং সুষম ডায়েটে সহায়তা করছে কি না তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সম্পূর্ণ পোর্টফোলিওটি পর্যালোচনা করছি।
সুইস এই কোম্পানি বলেছে, গত কয়েক দশক ধরে আমাদের এই প্রচেষ্টা একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলেছে। উদাহরণ হিসেবে কোম্পানিটি বলেছে, গত দুই দশকে আমাদের পণ্যগুলোতে চিনি এবং সোডিয়াম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধুমাত্র গত সাত বছরেই চিনি এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে আনার এই হার ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

০২ জুন, ২০২১।