নবী নোমান
ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকায় সোমবার (৩১ জুলাই) পণ্য বিক্রি শেষে ফিরে গেছে টিসিবির লোকজন। মাটিতে পড়ে থাকা চাল-ডাল কুড়াচ্ছেন বয়োবৃদ্ধা অসহায় প্রতিবন্ধী শানু বেগম (৬৫)। সাংবাদিক প্রবীর চক্রবর্তীর ধারণকৃত এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমুন নেছার। এগিয়ে আসেন সহযোগিতা নিয়ে। নিজ কার্যালয়ে ডেকে হাতে তুলে দেন চাল, ডাল, তেল মসলাসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী। তার নামে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড ও তার অসুস্থ স্বামীর নামে বয়স্ক ভাতা কার্ড নিবন্ধন করিয়ে দেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের চতুরা গ্রামের বাসিন্দা শানু বেগম। স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে একটি টিসিবি কার্ড পেয়েছিলেন তিনি। টাকা না থাকায় ৪৭০ টাকা মূল্যের টিসিবির পণ্য সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি। দিনভর পণ্য বিক্রি শেষে টিসিবির লোক ফিরে গেলে পড়ে থাকা চাল-ডাল কুড়াতে থাকেন তিনি। এ দৃশ্য ধারণ করেন ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রবীর চক্রবর্তী। পরবর্তীতে নিজের মুঠোফোনে ধারণকৃত ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে তিনি। ভিডিওটি দেখে অনেকেই শানু বেগমকে সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন।
সাংবাদিক প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, বয়োবৃদ্ধা এ মানুষটি যখন চাল-ডাল কুড়াচ্ছেন, তখন আমার মনে হয়ে ছিল যে এ মানুষটির জন্য কিছু করা প্রয়োজন। তাই আমি মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেই। আমার ভিডিও ছাড়ার কারনে যদি তিনি উপকৃত হোন, তাহলেই আমার স্বার্থকতা। অসহায় এ মানুষটির পাশে ইউএনও মহোদয় দাঁড়ানোয় আমি খুঁশি। অনেকেই তাকে সহযোগিতা করতে চেয়েছেন- সবাইকে ধন্যবাদ।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার কর্তব্য মনে করে তাকে একটি টিসিবির কার্ড দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমুন নেছা বলেন, আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি দেখে প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে দেখি পরিবারটি সত্যি অসহায়। প্রথমে তাকে নানাভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বিভিন্ন অফার প্রদান করি। এসময় প্রতিবন্ধী ও বয়োবৃদ্ধের কারণে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তাই তাকে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী প্রদান করি এবং রাষ্ট্রীয় সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সবাই মানুষ, মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
এদিকে উপকারভোগী শানু বেগম আবেগে আপ্লুত হয়ে ইউএনও, সাংবাদিক ও স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সকলের সার্বিক মঙ্গল কামনা করে দোয়া প্রার্থনা করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আবরার আহমেদ, ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নুরুন্নবী নোমান, উপজেলা পরিষদের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ।
০৩ আগস্ট, ২০২৩।