ফরিদগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতার যৌন লালসার শিকার প্রবাসীর স্ত্রী


আ. ছোবহান লিটন :
ফরিদগঞ্জে এক ছাত্রলীগ নেতার যৌন লালসার শিকার হয়ে স্বামীর সংসার হারিয়েছে এক প্রবাসীর স্ত্রী। নূর মোহাম্মদ বাকী বিল্লাহ নামের এই ছাত্রলীগ নেতার বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের উত্তর রাজাপুর গ্রামে। সে ওই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
তার বিরুদ্ধে অগোচরে নগ্ন ছবি তুলে নারীদের ব্ল্যাকমেইল, অর্থ আত্মসাত, চুরি ও প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়া প্রেমের অভিযোগ রয়েছে। তবে প্রতিপক্ষের লোকজন হয়রানির উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব অভিযোগ করেছে বলে বাকী বিল্লাহ এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন।
ফরিদগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত পৃথক তিনটি অভিযোগ ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উত্তর রাজাপুর গ্রামের মিঝি বাড়ির (দিঘির পাড়ের বাড়ি) নূর মোহাম্মদ বাকী বিল্লাহর সাথে একই বাড়ির শাহনাজ আক্তার ইতি (২৫) নামে এক বিবাহিত নারীর পরকীয়া সম্পর্ক চলে আসছিলো। সম্পর্কগত দিক থেকে উভয় চাচি-ভাতিজা। গত ১২ অক্টোবর রাতে বাকী বিল্লাহ শাহানাজ আক্তার ইতির ঘরে প্রবেশ করে। এসময় বাড়ির লোকজন টের পেয়ে ওই ঘরের বাইরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়। পরে আশপাশের লোকজন এসে দরজার তালা খুলে ঘরের ভিতর প্রবেশ করতে চাইলে শাহানাজ আক্তার বাধা দেয়। চাপে পড়ে দরজা খুলে দেয়ার পর ঘরের ভিতরে অনেক খোঁজা-খুঁজি করে বাকী বিল্লাহকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে শয়ন কক্ষের আলমারির তালা ভেঙে অচেতন অবস্থায় বাকী বিল্লাহকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বাকী বিল্লাহ কিছুটা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার জেরে আরব আমিরাত প্রবাসী ইকবাল হোসেন বতু তার স্ত্রী শাহানাজ আক্তার ইতিকে তালাক দেয়। তালাকনামায় ছাত্রলীগ নেতা বাকী বিল্লাহর সাথে তার স্ত্রীর অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের বলে তিনি দাবি করেন।
এ সম্পকে প্রবাসী ইকবাল হোসেন বতুর বৃদ্ধ বাবা হাজি আব্দুস সোবহান এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমার ছেলের প্রাক্তন স্ত্রী শাহানাজ আক্তার ইতির সাথে বাকী বিল্লাহর অবৈধ সম্পর্ক ছিলো। তারা সম্পর্কে চাচি-ভাতিজা। সব নষ্টের মূল এই বাকী বিল্লাহ। তাকে বিভিন্নভাবে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে আমার ছেলের স্ত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। তার কারণে আমার ছোট্ট নাতি আজ মা হারিয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১২ আক্টোবর রাতে আমি পাশের কক্ষে ঘুমাচ্ছিলাম। আশপাশের মানুষের ডাকা-ডাকিতে আমি ঘুম থেকে উঠি। পরে বাকী বিল্লাহকে অচেতন অবস্থায় আলমারির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া শাহানাজ আক্তার ইতি আত্মহত্যা করতে যায়। পরবর্তীতে আমার প্রবাসী ছেলে বতু আদালতের মাধ্যমে তার স্ত্রী ইতিকে তালাক দেয়।
অপরদিকে শাহানাজ আক্তার ইতি গত ৭ নভেম্বর ফরিদগঞ্জ থানায় বাকী বিল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় বাকী বিল্লাহ সুসম্পর্কের ফাঁদে ফেলে তার ছবির সাথে অশ্লীল ছবি সংযোজন করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় সে যৌন সম্পর্ক করার চেষ্টা চালায়। এছাড়া ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করা হয় বাকী বিল্লার বিরুদ্ধে।
এদিকে ওই একই বাড়ির মিজানুর রহমানের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা (৩০) বাদী হয়ে বাকী বিল্লাহর বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় আরেকটি অভিযোগ করেছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শাহনাজ আক্তার তার অগোচরে জানালা দিয়ে কিছু ছবি ধারন করে। পরবর্তীতে কৌশলে এই ছবিগুলো বাকী বিল্লাহ তার মোবাইলে সংরক্ষণ করে। কিন্তু গত ১২ আক্টোবর বাকী বিল্লাহকে জনগণ হাতেনাতে আটকের পর থেকে সে আমার ছবির সাথে অশ্লীল ছবি সংযোজন করে ইন্টারনেটে প্রকাশ ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির হুমকি দিয়ে আসছে। এছাড়া সে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মমিন বলেন, বাকী বিল্লার বিরুদ্ধে নারীর ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল ও প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয় প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা বেরিয়ে এসেছে। এ নিয়ে থানার ওসি বাদী-বিবাদী সব পক্ষকে নিয়ে থানায় বসে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
এ সম্পর্কে বাকী বিল্লাহ এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমি একজন শিক্ষিত লোক। মাস্টার্সে পড়ি। ষড়যন্ত্র করে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। তবে ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল, পরকীয়াসহ বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক জবাব তার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।