ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা
নুরুন্নবী নোমান
ফরিদগঞ্জে অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা কৃত্রিম বন্যা হিসেবে রূপ নিয়েছে। এতে রাস্তা-ঘাট, মৎস্য, কৃষি ও পোল্ট্রি খামারসহ উঠতি ফসল এবং শাকসবজির ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখনো উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ির আঙ্গিনা পানির নিচে তলিয়ে আছে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) উপজেলার কৃষি, মৎস্য, বিদ্যুৎ বিভাগ ও প্রকৌশল বিভাগের হিসেবমতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় শত কোটি টাকা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আবরার আহমেদ বলেন, এ উপজেলায় আঞ্চলিক ও মূল সড়কের মধ্যে ৫০ কিলোমিটারের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। এতে ২৫টি পাঁকা সড়ক পূনঃসংস্কার না করতে পারলে জনচলাচল মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। কৃত্রিম এ বন্যায় এ উপজেলায় আধাপাকা, সলিংসহ সড়কের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাড়িয়েছে আনুমানিক ২৫ কোটি টাকা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, মৎস্যচাষের দিক দিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সারাদেশের মধ্যে ৪র্থ স্থানে থাকলেও এবারের অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় কৃত্রিম বন্যয় মৎষ্যচাষিদের প্রায় মাছের ঘের, পুকুরের প্রায় ৯৫০ হেক্টরের চাষকৃত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও মাছের পোনা ভেসে যায়। এতে মৎস্যচাষিদের ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
সেচপ্রকল্প কর্তৃপক্ষ নিষ্কাশন করছে এমন মৎস্য প্রজেক্টগুলোর ২৬৯৫ হেক্টরের মধ্যে ৬.৭৫ হেক্টরে ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সাড়ে ৭ হাজার মৎস্য চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। সহজ ও স্বল্প সুদে ঋণ দিলে মৎস্য চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল কিশোর সরকার জানান, উপজেলার মধ্যে ৫৫০ হেক্টর কৃষি জমি ক্ষতিসাধিত হয়েছে। তার মধ্যে আউশ আমন ৪৭ হেক্টর, আমন ধানের বীজতলা ৯৪ হেক্টর, মৌসমী শাখ সবজি ৭২ হেক্টর, আখ ১৩ হেক্টর। কৃষি খাতে আনুমানিক ১০ কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতের ফরিদগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, অতিবৃষ্টির কারণে গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে ২০ বৈদ্যতিক খুঁটি নষ্ট হয়েছে। অন্তঃত ৯৫টি স্থানে তার ছিড়ে পরেছে, ১৫ ট্রান্সফরমার বিকল ও আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে ৫০ টি মিটারের ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা অপসারণ করে লাইন চালু করা হয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুমন ভৌমিক বলেন, অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে ১৪৭টি পোল্ট্রি খামার ও ২টি ডেইরী খামার নষ্ট হয়েছে। পানিবাহিত রোগে ২টি গরু ও ১৪ টি ছাগল মারা গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে খামারিদের ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, ফরিদগঞ্জের ১৪ থেকে ১৫টি কমিটিউনিটি ক্লিনিক ও ২টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র জলাবদ্ধতার কারণে কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা এসব এলাকার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌছেদেন। পানি কমে যাওয়ার পর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপকহারে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ ডায়েরিয়া, কলেরা,রচর্ম ও ক্ষতজনিত রোগীর সংখ্যা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌলি মন্ডল বলেন, অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। স্লুইস গেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে পানি নিস্কাশন হয়ে যাবে। স্ব-স্ব দপ্তরের প্রধানদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করে তালিকা প্রণয়ন করার জন্য বলা হয়েছে।
০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।