ব্রিটেনের সংসদে বাংলাদেশি চার নারী: রুশনারা টানা চারবার টিউলিপ-রুপার হ্যাটট্রিক প্রথমবার আফসানা

ব্রিটেনের সংসদে বাংলাদেশি চার নারী

ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে বিরোধী লেবার পার্টির ভরাডুবি হলেও সংসদ সদস্য হয়েছেন এই দল থেকে লড়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার নারী। এদের মধ্যে রুশনারা আলী টানা চারবার, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ও রুপা তিনবার এবং প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন আফসানা বেগম।

এবারই প্রথম চারজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন ব্রিটেনের সংসদে।

মূলত ব্রেক্সিটের (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া) ভাগ্য নির্ধারণে বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে আগাম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের ফলাফল শুক্রবার সকালেই আসতে দেখা যায় এতে বড় জয় পেয়েছে ব্রেক্সিটপন্থী বরিস জনসনের কনজারভেটিভ পার্টি।

অনেক আসন হারিয়েছে উদারপন্থী লেবার পার্টি। এই দলের হয়ে উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে নির্বাচন করে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। কনজারভেটিভ পাটির জনি লুককে ১৪ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ ২০১৫ সালে লেবার পার্টি থেকে প্রথম নির্বাচন করেই জয়ী হন। ২০১৭ সালের নির্বাচনেও পুনঃনির্বাচিত হন। ৩৭ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিককে পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।

পশ্চিম লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে টানা তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়েছেন রুপা হক। তার আদি বাড়ি বাংলাদেশের পাবনায়। ৪৮ বছর বয়সী রূপা ২০১৫ সালের নির্বাচনে রক্ষণশীলদের হাত থেকে আসনটি পুনরুদ্ধার করেছিলেন। ২০১৭ সালের নির্বাচনেও তিনি আসনটি ধরে রাখেন। এবার কনজারভেটিভ প্রার্থী জুলিয়ান গ্যালান্টকে হারিয়েছেন ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে। তিনি এর আগে ডেপুটি মেয়র হিসেবে স্থানীয় সরকারে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের দুটি আসনই ঐতিহ্যগতভাবে লেবার পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে গত তিনবারের সংসদ সদস্য সিলেটের বিশ্বনাথের মেয়ে রুশনারা আলী আবারও সংসদ সদস্য হয়েছেন। কনজারভেটিভ প্রার্থী নিকোলাস স্টভোল্ডকে হারিয়েছেন সাড়ে ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে ২০১০ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রুশনারা। কনজারভেটিভ সরকারের আমলেও তিনি বাংলাদেশ-বিষয়ক বাণিজ্য দূতের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি জানান, উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের ভুরকি গ্রামের মাস্টার হাজী আফতাব আলী ও রানু বেগমের মেয়ে রুশনারা আবারও ব্রিটিশ সংসদ সদস্য হওয়ায় এলাকায় আনন্দের বন্যা বইছে। তার বিজয়ে ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটিও আনন্দ প্রকাশ করেছে।

টাওয়ার হ্যামলেটস বারার অন্য আসন পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস থেকে প্রথমবার নির্বাচন করেই বাজিমাত করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আফসানা বেগম। তিনি কনজারভেটিভ প্রার্থী শিউন ওককে প্রায় ২৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন।

আফসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসে হলেও তাদের আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। আফসানার বাবা মনির উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর ছিলেন।

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি জানান, পপলার লাউম হাউস আসন থেকে প্রথমবারের মতো একজন বাঙালি নারী জয়ী হওয়ায় উপজেলাবাসীর মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। জগন্নাথপুর পৌরসভার কাউন্সিলর মামুন আহমদ বলেন, আমাদের এলাকার মেয়ে আফসানা শুধু উপজেলাকে আলোকিত করেননি, বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন।

এবারের নির্বাচনে তিন দল থেকে মোট সাতজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী অংশ নেন। এদের মধ্যে লেবার পার্টি থেকেই তৃতীয়বারের মতো লন্ডনের বেকেনহাম আসনে নির্বাচন করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের মেয়ে ব্যারিস্টার মেরিনা আহমেদ। এবারও তিনি কনজারভেটিভ প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন।

কনজারভেটিভ পার্টির একমাত্র বাঙালি প্রার্থী আনোয়ারা আলী হ্যারো ওয়েস্ট আসনে লেবার প্রার্থীর কাছে হেরেছেন। আর মৌলভীবাজারের মেয়ে বাবলিন মল্লিক লিবডেমের মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছিলেন কার্ডিফ সেন্ট্রাল আসন থেকে। সেখানে তৃতীয় হয়েছেন তিনি।