অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায়
মোজাম্মেল প্রধান হাসিব
মতলব দক্ষিণে ভুট্টা চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা। কম সময়ে এবং অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছে এ অঞ্চলের চাষিরা। উপজেলার পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এবার ভুট্টা চাষ বেশি হওয়ায় সবুজ সমারোহে পরিণত হয়েছে এক মনোরম দৃশ্যের। ভুট্টার জমিতে সবুজ পাতার ফাঁকে আসতে শুরু করেছে ফুল ও ভুট্টার মোচা। তা’ দেখে ভুট্টা চাষিদের মুখে ফুটেছে রঙিন হাসি।
মানুষের জন্য ভুট্টা যেমন পুষ্টিকর, তেমনি মাছের খাবার ও পোল্ট্রিসহ বিভিন্ন খাবারে যুক্ত হওয়ায় এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ উপজেলার সব ধরনের কৃষি জমিতে ভুট্টা চাষ এনে দিয়েছে নতুন এক গতি। আবার ভুট্টা চাষের সাথে একই জমিতে আলু, টমেটো অথবা অন্য যেকোনো ধরনের মৌসুমী শস্যের চাষেও বাড়তি অর্থ পাচ্ছেন এ উপজেলার চাষিরা।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষকদের অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭শ’ ৫৫ হেক্টর জমি। ভুট্টা চাষ লাভজনক ও বাজারে দাম বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে ভুট্টার চাষ বেড়েছে প্রায় ৪-৫শ’ হেক্টর জমিতে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন ভুট্টা ক্ষেত পরিচর্যা ও নিড়ানি এবং সেচ কাজসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। ভুট্টা গাছগুলো হাঁটু ও কোমর সমান হয়েছে। আর কিছু এলাকায় আগাম ভুট্টা রোপণ করায় গাছ মানুষের উচ্চতাকে ছাড়িয়ে গেছে এবং কোথাও কোথাও গাছে মোচা এসেছে। এসব ভুট্টা আগাম ঘরে তোলা যাবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক মনির হোসেন বলেন, বোরো চাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। অথচ যখন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয় তখন ধানের বাজারে ধস নামে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচই উঠে না। কিন্তু ভুট্টার উৎপাদন খরচ যেমন কম, দামও বেশি থাকে বলেই আমি ভুট্টা চাষ করেছি।
খাদেরগাঁও ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের আরেক চাষি মোশারফ হোসেন প্রধান জানায়, আমি ৫০ শতাংশ জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টার পাশাপাশি সাথি ফসল হিসেবে আলু চাষ করেছি। কয়েক দিন আগে আলু তোলা হয়েছে। আশা করছি ভুট্টার ফলনও সন্তোষজনক হবে। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে আরও বেশি করে ভুট্টা চাষ করতেন বলে জানান তিনি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার একাধিক চাষি বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম। দামও ভালো পাওয়া যায়। একটু দেরিতে বিক্রি করলে মণে ২-৩শ’ টাকা বেশি পাওয়া যায়। তাই এবার ভুট্টা চাষ করেছি।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষের জন্য ইউরিয়া ৪৬ কেজি, ডিএপি ২০ কেজি, এমওপি ২৬ কেজি, জিপসাম ৪ কেজি, দস্তা ৫শ’ গ্রাম ও প্রয়োজন অনুযায়ী কীটনাশকসহ বীজ ও পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় ৪ থেকে সাড়ে ৫ মেট্রিকটন এবং হাইব্রিড চাষ করলে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় ৮ থেকে ১০ মেট্রিকটন পর্যন্ত। তাই অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ হওয়ায় এ উপজেলার কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও জানান, ভুট্টার পাতা, গাছ ও মোচাও ব্যবহার করা যায়। তাই ভুট্টা চাষে কৃষকরা অন্য ফসলের তুলনায় লাভবান হয়।
০৪ এপ্রিল, ২০২৩।