টাকা আত্মসাৎ ও পারিবারিক হয়রানির শিকার
স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুর সদর সাপদীতে টাকা আত্মসাৎ ও পারিবারিক হামলা ও মামলার শিকার বাবুল শেখ (৪৮) হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদেশে থাকাকালীন নিজের উপার্জিত সমুদয় টাকা দেশে পাঠিয়ে বিপাকে পড়েছেন বাবুল শেখ। নিজ টাকা ফিরে পেতে নিরর্থক বিড়ম্বনার শিকার বাবুল শেখ পরিবারের সদস্যদের দ্বারা লাঞ্ছিত- আহত ও প্রাণনাশের হুমকির শিকার হয়েছেন। মিথ্যা মামলায় জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা নিয়ে বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাবুল শেখ।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, বাবুল শেখ পিতা মো. নুরুল ইসলাম শেখ। চাঁদপুর সদর সাপদি এলাকার বাসিন্দা। গত ২২ বছর প্রবাসী হিসেবে সৌদি আরবে চাকরি করেন। জানা যায়, বাবুল শেখ তার বাবা নুরুল ইসলাম শেখের কাছে বাগড়া বাজার কৃষি ব্যাংকসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রায় ২৩ লক্ষাধিক টাকা পাঠিয়েছেন যার রেকর্ড রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছেন। সরলতা ও ভালোবাসার নিরিখে কারো কাছে কোনো অভিযোগও করেননি।
বিদেশ থেকে জমি কেনা, ঘর করা, সংসার খরচ, ৪ বোনের বিবাহের জন্য নিয়মিত টাকা পাঠান ভাই মাসুদ শেখের কাছে।
এছাড়া সারা জীবিনের উপার্জনের সঞ্চিত টাকা নিজের কোন একাউন্ট না থাকায় আপন ভাই মাসুদ শেখের একাউন্ট ইউসিবিএল ব্যাংক চাঁদপুর শাখার মাধ্যমে গত ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সাল থেকে ২৪ শে সেপ্টেম্বর ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা পাঠান জমা রাখার জন্য। যাতে দেশে ফিরে নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। সংসার খরচ, জমি কেনা, ঘরবাড়ি তৈরি জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছেন দফায় দফায় যার হিসাব রাখার প্রয়োজনও মনে করেনি।
সরল বিশ্বাসে বাবুল শেখ প্রবাস জীবন শেষ করে গত ২০১৪ সালে দেশে ফিরে আসেন এক বুক স্বপ্ন নিয়ে কিন্তু দেশে ফিরে ভাই মাসুদ শেখের কাছে টাকা চাইলে শুরু হয় নানা হয়রানি। মাসুদ দাবি করেন- সব টাকাই খরচ হয়ে গেছে। মাসুদ তার আপন বড় ভাইকে ঠকাতে সাথে নিজের বাবা নুরুল ইসলামকে সঙ্গী বানিয়ে বিভিন্ন বাহানায় বাবুল শেখকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করতে নানা কৌশল, গালিগালাজ এমন কি প্রান নাশের হুমকি প্রদান করে।
বাবুল শেখ বাধ্য হয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে শালিস আহবান করেন। শালিসে মাসুদ শেখ ৭০ লক্ষ টাকার কথা স্বীকার করেন এবং ফেরত দেয়ার জন্য মৌখিক অঙ্গীকার করেন। আবার শুরু হয় নানা হয়রানি, টাকা প্রদানের কথা অস্বীকার করে মাসুদ সেখ। বাধ্য হয়ে বাবুল শেখ একটি মানিস্যুট মামলা দায়ের করেন চাঁদপুর সদর আদালতে, যার নং সি আর ৬৪০/২০২০। যা আজো আদালতে তদন্তাধিনে কালক্ষেপনে ঝুলে আছে।
এ দিকে মাসুদ শেখ তার বাবাকে দিয়ে বাবুল শেখের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন চাঁদপুর আদালতে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে এবং পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে নানা হয়রানি নির্যাতন করে চলেছেন বাবুল শেখ এর উপরে। বাবুল শেখকে শারীরিকভাবে আহত করে, মামলা দিয়ে ক্ষান্ত হননি তারা আবারও দ্বিতীয় আরেকটি মামলা করে বাবুল শেখ ও তার স্ত্রী নাসিমার বিরুদ্ধে। মিথ্যা মামলায় পুলিশকে প্রভাবিত করে গ্রেফতার করে হাজতে যেতে বাধ্য করেন বাবুল শেখকে। মামলা নং ৬৯৮/২০২০। এ মামলায় বাবুল শেখ বর্তমানে জামিনে আছেন।
বাবুল শেখ জানান, আমার ভাই মাসুদ টাকা আত্মসাৎ এবং হয়রানি করার জন্য সুকৌশলে বিভিন্ন অজুহাতে বাবা ও পরিবারের অন্যান্য বোনদেরকে সাথে নিয়ে নির্যাতন-হয়রানি অব্যাহত রেখেছে, প্রাননাশে চেষ্টায় একাধিকবার হামলা করে মুখের দাড়ি পর্যন্ত ছিঁড়ে যখম করে এবং পুলিশকে প্রভাবিত করে আমাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মামলা সুরাহা করার নামে ভয়-ভীতি প্রদর্শন সহ কুচক্রী মহলের মাধ্যমে দফায় দফায় আবারও ক্ষতিগ্রস্থ করার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে বাবুল শেখ গত ২৬ জানুয়ারি ২০২১ সালে চাঁদপুর নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মাসুদ শেখ, মধু বেপারি, ফারুক বেপারী, পারুল বেগমসহ অজ্ঞাত ৫/৬জনের বিরুদ্ধে সাত দ্বারা মামলা করেন।
অভিযোগে জানা যায়- গত ২৮ জানুয়ারি ২১ সকালে উল্লেখি বিবাদিগন বাবুল শেখের বসত ঘরে এসে খুন করার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়, ডাক- চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তারা প্রান নাশের হুমকি প্রদান করে চলে যায়।
বাবুল শেখ দাবি করেন, মানিস্যুট মামলায় আদালতে যে সকল প্রমাণাদি তিনি সাবমিট করেছেন, তা অনুযায়ী বিজ্ঞ বিচারক সঠিক রায় দিলে তিনি তার টাকা পয়সা ফেরত পেতে পাবেন। এমতাবস্থায় বাবুল শেখ বিজ্ঞ বিচারক, প্রশাসন ও আদালতের কাছে অনুকম্পা অনুগ্রহ কামনা করছে। দ্রুততম সময়ে মামলার রায় দিয়ে তাকে মানবেতর জীবন থেকে উদ্ধার করার জন্য মিনতি জানাচ্ছে।
স্থানীয় শালিশদের মতে- বাবুল অত্যন্ত নিরীহ ধার্মিক মানুষ হওয়ায় তার বাবা ভাই-বোনেরা মিলে তার সারা জীবনের উপার্জিত অর্থ আত্নসাৎ করেই ক্ষান্ত হয়নি তাকে সর্বস্বান্ত এবং প্রাণে মেরে ফেলার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, বৃদ্ধ হলেও বাবুলের বাবা নুরুল ইসলাম নৈতিক চরিত্রহীন একজন অপরাধী, যার বিরুদ্ধে একাধিক গ্রাম্য শালিশের অভিযোগ রয়েছে, বয়সের কারণে অনেক অপরাধ ধামাচাপা পড়ে যায় বলে জানা যায়। এসব কারণেও সে তার ছেলে হওয়া স্বত্বেও বাবুলকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
অভিযোগ রয়েছে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ব্যাক্তিগতভাবে প্রভাবিত হয়ে তদন্তে কালক্ষেপণ করছেন। মাসুদ শেখ স্থানিয় কিছু স্বার্থান্বেসী মানুষকে দিয়ে বাবুল শেখকে যেন-তেনভাবে মীমাংসা দিয়ে আদালতকে প্রভাবিত করার পাঁয়তারা করছে। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন ও আদালতের সুদৃষ্টি কামনা করছেন সমাজের সুধীজন।
০৫ এপ্রিল, ২০২১।