হাইমচরে জোয়ারের পানি কেড়ে নিলো মাছ চাষিদের স্বপ্ন

সাহেদ হোসেন দিপু

হাইমচরে মেঘনার জোয়ারের পানি কেড়ে নিল মাছ চাষিদের স্বপ্ন। বুধবারের (৫ আগস্ট) আকস্মিক জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা পুকুর ও ঝিলের সব মাচ চাষিদের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। বেড়িবাঁধের উপর বন্ধ খালের মুখ ছুটে খালের ভিতর দিয়ে পানি ঢুকে গিয়ে অনেকেরই মাছের ঘের তলিয়ে যায়। নদীর পশ্চিমপাড়ে নীলকমল ইউনিয়ন ও হাইমচর ইউনিয়নেও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছে মাছ চাষিরা। নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে তাদের সাজানো মাছের ঘের। পানিতে ভেসে গেল তাদের সাজানো স্বপ্ন।

জানা যায়, হাইমচর উপজেলার মধ্যচরের সাহেবগঞ্জ, নিউচর, বাহেরচর মিয়ারবাজার, ঈশানবাল, গাজীপুর, চরভৈরবী, আলগী উত্তর ও দক্ষিণের ৫ শতাধিক পুকুর ও ঝিলের মাছ গত বুধবার বিকেলে আকস্মিক জোয়ারে ভেসে গেছে।

বুধবার বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টায় মাত্র ৩০ মিনিটে আকস্মিক জোয়ারে লন্ড-ভন্ড হয়ে গেছে পুকুর ও খামারগুলো। এতে হাইমচরের ৪ শতাধিক মাছ চাষির স্বপ্ন বিলীন হয়ে গেছে। যা টাকার অংকে প্রায় ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

নীলকমলের মধ্যচর বাহেরচরের মাছ চাষি মুনছুর পাটওয়ারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ভাই আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমার জীবনের অর্জিত সম্পদ ও ধার-দেনা করে মাছের প্রকল্প করেছি।  যা সবাই জানে। এক নিমিষেই আমার সব চলে গেল। আমার ছোট বড় ৮ ঝিলে প্রায় ১ কোটি টাকার মাছ ছিল। স্বাভাবিকের চেয়ে ৬/৭ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারের ফলে সব খামার ভেসে গিয়ে মাছ চলে গেছে। আমি এখন সর্বশান্ত। মাছের খাদ্য ও মাছের পোনা ক্রয়ের টাকা পরিশোধ করার কিছুই রইলো না।

নীলকমল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মৎস্য খামারী বাচ্চু সরকার জানান, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। জোয়ারের পানি আমার তিনটি মাছের ঝিল পানিতে তলিয়ে গিয়ে আমার প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার সাজানো মাছের ঝিলগুলো এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমার এলাকার সুরুজ ছৈয়াল, মামুন মিজি, মিনু মোল্লা ও শিকদার মৎস্য খামার পরিচালক নাজমুল আলম, ফারুক গাজী, নূর মোহাম্মদ বেপারী, শাকিল খা, ফারুক খা, তোফাজ্জল মালের ঝিলের মাছগুলোও পানিতে ভেসে গেছে।

আলগী উত্তরের আব্দুর রহমান, জিল্লু আখন, সফিক দেওয়ান জানান, এলাকার সব মাছ ভেসে গেছে। আমরা এখন সর্বশান্ত।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক গাজী বলেন, বেড়ি বাঁধের ভিতরে এবং বাইরের সব যায়গায় পানিতে মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৬ শ’ পুকুর ও খামারে মাছ চাষ হয়। বুধবারের অস্বাভাবিক জোয়ারের ফলে ৬ ইউনিয়নে প্রাথমিক তথ্যমতে প্রায় ২৫৫ জন চাষির ৪৩০টি পুকুর ঝিলের মাছ ও অবকাঠামো ক্ষতি হয়েছে, যা টাকার অংকে ৬ কোটি টাকার বেশি হবে। তিনি জানান, ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে।

০৯ আগস্ট, ২০২০।