হাইমচরে পানের ভালো ফলনে ৯ শতাধিক কৃষকদের মুখে হাসি


শওকত আলী
হাইমচর উপজেলায় পান ও সুপারি চাষে বহু বছর ধরে খ্যাতী অর্জন করে এর ঐতিহ্য ধরে আছে। উপজেলার অধিকাংশ মানুষ মৎস্য ও কৃষির উপর নিভরশীল। তবে এখন শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় এ এলাকার অনেকেই চাকরি এবং ব্যবসা করছেন অত্যন্ত সুনামের সাথে। বর্তমানে উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন অনেকগুণ বেড়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে মেঘনার ভাঙন থেকে রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করায় জমির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে কয়েকগুণ। এবছর পুরো উপজেলায় সব পানের বরজের অবস্থা ভাল অবস্থানে রয়েছে। এ এলাকার ব্যবসায়ীরা বিগত বছরগুলোর চেয়ে পান চাষ করে ভাল মুনাফা অর্জন করেছে। এ বছর পান চাষ বেশ ভাল হয়েছে। গত কয়েকমাস পান বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। তাই কৃষক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীসহ সবার মুখেই আনন্দের হাসি ফুটেছে।
গত কয়েকদিন হাইমচর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের পানের বরজ ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২১৭ হেক্টর জমিতে পান এবং ৩১০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়। এই পান-সুপারি চাষের সঙ্গে ৯ শতাধিক কৃষক জড়িত রয়েছেন। এই দুই ফসল থেকে বছরে একজন কৃষক কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় করেন। উপজেলার কৃষকরা পান ও সুপারি চাষ করেই পরিবারের খরচ জোগান এবং তাদের পারবারের চাহিদা পূরণ করেন। জেলার হাইমচরের পান ও সুপারি উপজেলাগুলোর চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলায় ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। চাঁদপুরের ৮ উপজেলার মধ্যে পান ও সুপারি উৎপাদনে এখন এ হাইমচর উপজেলার ঐতিহ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে।
উপজেলার আলগী উত্তর ইউনিয়নের মহজমপুর, ছোট লক্ষ্মীপুর ও আশপাশের গ্রামের একাধিক কৃষকের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, বর্তমান মৌসুমে পান বেশি বিক্রি হচেছ। সপ্তাহে দুই থেকে ৩ বার তারা বরজ থেকে পান কেটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। অধিকাংশ কৃষকই পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার রামপুর বাজার, চাঁদপুর সদর ও মতলবে পান বিক্রি করতে নিয়ে যান। রাত ৪টা থেকে সূর্যোদয়ের আগেই ওই বাজারগুলোতে বেচা-বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এ কারণে পান বিক্রির জন্য একদিন আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। এ এলাকার অধিকাংশ চাষি জানান, এ বছর চাষকৃত পান বিক্রি করে তারা ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। যা’ তারা বিগত বছরগুলোতে হননি।
সদর উপজেলার মহামায়া এলাকার পানের ব্যবসায়ী জমির হোসেন বলেন, পানের মৌসুম এলে তিনি হাইমচরে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পান ক্রয় করে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। এতে করে তার প্রতি বিড়ায় ১০ থেকে ২০ টাকা লাভ হয়। আর আড়ৎ থেকে ক্রয় করলে লাভ করা যায় না। তিনি আরো বলেন, পান ক্রয়-বিক্রয়ে মূল্য কয়েকভাবে নির্ধারণ হয়। কেউ পাইকারী, কেউ খুচরা এবং কেউ পানের খিলি বিক্রি করেন। যিনি খিলি পান বিক্রি করেন তার এক বিড়া পানের মূল্য দাঁড়ায় কমপক্ষে ৩শ’ টাকা।
পান চাষি মোস্তফা ও মো. জসিম মিয়া বলেন, এবছর আমরা এক বিড়া পান ১শ’ টাকা থেকে শুরু করে ১৩০ টাকায় বিক্রি করছি। অন্য বছরের তুলনায় পানের দাম খুবই ভালো পাওয়া যাচ্ছে। বরজ থেকে পান কেটে অধিকাংশ কৃষকই রামপুর বাজারে পাইকারী বিক্রি করেন। আবার বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু ব্যবসায়ী আমাদের কাছ থেকে এসে ১শ’ ২শ’ বিড়া পান পাইকারী দরে ক্রয় করে নিয়ে যান। তারা আবার এসব পান বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন এবং তারা ও সে পান বিক্রি করে লাভ করে তাদের সংসার ভাল ভাবে চালাতে পারছেন বলে তারা জানান।

১০ অক্টোবর, ২০১৯।