স্টাফ রিপোর্টার
হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণে তদন্ত কাজ শুরু করেছে দুদক। গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগকারী, অভিযুক্তসহ ইউপি সদস্য, ইউপি সচিব ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত প্রতিনিধি দল।
অভিযোগ তদন্তে প্রতিনিধি দলের প্রধান উপজেলা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা, সদস্য উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম মিজানুর রহমান ও সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল গণি অভিযোগকারী, অভিযুক্তসহ অন্যান্য ইউপি সদস্য, ইউপি সচিব, স্থানীয় ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে তাদের মৌখিক অভিযোগ শুনেন এবং তাদের কাছ থেকে লিখিতভাবে নিজ নিজ বক্তব্যগুলো সংগ্রহ করেন।
অভিযোগকারীরা হলেন- ইউপি সদস্য রবিউল হোসেন মিয়াজী, হাবীব মোল্লা, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সবুজ, মইনুল হক দুলাল সর্দার, হাবিব, সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য জাকিয়া বেগম, মমতাজ বেগম ও জোসনা বেগম। তবে এদিন অভিযোগকারী ৮জন ইউপি সদস্যের মধ্যে থেকে ৪ জন সোমবার তদন্ত টিমের কাছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। অপর ৪ জন স্বেচ্ছায় তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়ার আবেদন করেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত বছরের ২১ অক্টোবর হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, সরকারি টাকা আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা, ছুটি না নিয়ে এবং প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব না দিয়ে দেশের বাইরে অবস্থান নেয়ার অভিযোগ এনে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণে লিখিত আবেদন করেন ইউনিয়ন পরিষদের ৮ জন সদস্য। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণলায়ের সিনিয়র সচিব বরাবর এ অভিযোগটি দেয়া হয়। যার অনুলিপি দুর্নীতি দমন কমিশন ও চাঁদপুরের জেলা প্রশাসককে দেয়া হয়।
এ অভিযোগের সূত্র ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়টি তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব প্রদান করেন। জেলা প্রশাসক হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করলে তিনি বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফাকে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম মিজানুর রহমান ও সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল গণি।
অভিযোগ পত্রে দেখা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটু নির্বাচিত হওয়ার পর এখনো প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেননি। আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে বার্ষিক বাজেট প্রকাশ করেননি। সরকারি এডিপি, এলজিএসপি, টিআর, ১% কাবিখা ইত্যাদি কর্মসূচি বা প্রকল্পের বরাদ্দ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ, পরামর্শ, মিটিং না করেই তিনি স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও বেআইনীভাবে প্রকল্পের কাজ করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করছেন।
এছাড়া তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম দিকে ১% টাকা দিয়ে টয়লেট নির্মাণ ও পাম্প স্থাপনের কাজ করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। সরকারি ৪০ দিনের কর্মসূচির ৪৩% টাকা কর্তন করে সম্পূর্ণ টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছেন। গৃহহীনদের মাঝে ঘর দেয়ার নামে ৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। ইউপি সদস্যদের সম্মানি ভাতা নিয়মিত দেয়া হয়নি। এছাড়া অভিযোগ পত্রে চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটু বিরুদ্ধে আরো অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগকারীদের মধ্যে ইউপি সদস্য রবিউল হোসেন মিয়াজী ও মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সবুজ বলেন, তদন্ত টিম এসে এলাকাবাসী ও আমাদের সাথে কথা বলেছেন এবং আমাদের কাছ থেকে লিখিত নিয়েছেন। তদন্ত প্রতিনিধি দল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর তাৎক্ষণিক সত্যতা পেয়েছেন বলে তারা জানান।
এ প্রসঙ্গে জাকির হোসেন লিটু বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আশা করি তদন্তে তা প্রমাণিত হবে।
তদন্ত প্রতিনিধি দলের সদস্য ও উপজেলা সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল গনি বলেন, আমরা অভিযোগকারী, অভিযুক্তসহ অন্যান্য ইউপি সদস্য, সচিব ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছি এবং তাদের কাছ থেকে লিখিত নিয়েছি। এছাড়া ডকুমেন্টারী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগামিকালের (আজ) মধ্যে তদন্ত প্রতিনিধির কাছে জমা দেয়ার জন্য ইউপি সচিবকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগের আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আশা করি আমরা ১ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো।
২০ আগস্ট, ২০১৯।