উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, সাংবাদিকসহ আহত অর্ধ শতাধিক
মোহাম্মদ হাবীব উল্লাহ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেশব্যাপী ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন হাজীগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন টোরাগড় এলাকায় শিক্ষার্থীসহ অন্যরা সড়ক অবরোধ করলে সেখানে মিছিল নিয়ে অবস্থান নিয়ে যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও সাংবাদিকরা কথা বললে তারা কিছুটা নিবৃত হয়। কিন্তু পেছন থেকে আবারো পুলিশ ও সাংবাদিকদের ঘিরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও গুলি করা শুরু করলে পুলিশ বাধ্য হয়ে পিছু হটে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা টোরাগড় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেয়।
পরে হাজীগঞ্জ পৌরসভার গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে পৌর মেয়রের গাড়ি, বিদ্যুত মেরামতের ডিজিটালাইজড পিকআপসহ ৩টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া পৌরসভা ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এসময় পৌরসভার ভেতরে থাকা ৬টি মোটরসাইকেল ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থাকা ২টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।
পৌরসভায় আগুন দেয়ায় পৌরভবনে আটকা পড়েন পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আসম মাহবুব-উল আলম লিপন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন মিয়াজীসহ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে পৌরসভার দ্বিতীয় তলার পেছন দিয়ে জানালা ভেঙে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস পুলিশের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে পৌরসভার সব গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
পৌরসভার মেয়র আসম মাহবুব-উল আলম লিপনকে হাজীগঞ্জ বিসমিল্লাহ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজার থেকে সরকারি পাইলট হাইস্কুল এন্ড কলেজের গেট পর্যন্ত এক ভয়াবহ দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। পুরো সড়ক জুড়ে আগুন আর আগুন। এসময় দুর্বৃত্তরা টোরাগড় এলাকায় রাস্তার দু’ধারে অবস্থিত বিভিন্ন দোকাপাটে ভাংচুর আগুন লাগিয়ে দেয়।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় টোরাগড় এলাকায় বিভিন্ন মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় টোরাগড় ৮নং ওয়ার্ড দক্ষিণপাড়ার সরকার বাড়ি আনু মিয়ার ছেলে আজাদ সরকার (৪৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুমিল্লা ট্রমা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। দুপুরে সংঘর্ষের সময় আন্দোলনকারীদের ছুরির আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছিল আজাদ সরকার। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধরা টোরাগড় এলাকার আওয়ামী সমর্থিত কাজী বাড়ির সামনে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে।
আন্দোলনকারীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপস শীল স্যার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ কুমার দেসহ আমরা টোরাগড় এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। আমাদের অনেক পুলিশ আহত হয়েছে।
০৫ আগস্ট, ২০২৪।