হাজীগঞ্জে ছাত্র-জনতার বিজয় উল্লাস, মিষ্টি বিতরণ

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার প্রধান থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে এমন খবরে হাজীগঞ্জে বিজয় উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন কয়েক সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা ও বিএনপি নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি তুলে শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলন প্রতিরোধ করতে সরকার কারফিউ জারি করে। সেই কারফিউ উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে পড়ে শিক্ষার্থীসহ আম-জনতা। অবশেষে সোমবার দুপুরের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান।
এদিন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাধমে দেশ পরিচালানার কথা বলেন। এই খবরে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন টোরাগড়, মকিমাবাদ, আলীগঞ্জ ও কংগাইশ, রান্ধুনীমূড়া থেকে হাজীগঞ্জ বাজারে এসে বিজয় উল্লাস শুরু করেন ছাত্র-জনতা।
তাদের সাথে যোগ দেন পৌরসভাধীন অন্যান্য এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা, বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় শুরু করেন বিজয় মিছিল, দিতে থাকেন বিভিন্ন শ্লোগান। তাদের শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে হাজীগঞ্জের রাজপথ।
এছাড়া শুরু হয় মিষ্টি বিতরণ। হাজীগঞ্জ বাজার ও পৌরসভাধীন আলীগঞ্জ, এনায়েতপুর, বলাখাল বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারেও ছাত্র-জনতাসহ বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীরা বিজয় উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন। এসময় ছাত্র-জনতা ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে, কেউ মাথায় দিয়ে, আবার কেউ হাতে নিয়ে বিজয় উল্লাস করেছেন।
এদিকে বিজয় উল্লাসে বিক্ষুব্ধরা পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আসম মাহবুব-উল আলম লিপন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মাঈনুদ্দিনসহ দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকের বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করেন। এর মধ্যে দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন মালামাল লুট-পাট করে নিয়ে যায়। এছাড়া অনেকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া বিক্ষুব্ধদের মধ্যে অনেকে হাজীগঞ্জ থানায় হামলা করার চেষ্টা করেন। এসময় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ ঢাল হয়ে দাঁড়ান, বিক্ষুব্ধদের ফিরিয়ে দেন। অপরদিকে গুলি করে শিক্ষার্থী ও জনতার হামলা এবং হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেন নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই হাজীগঞ্জ বাজারে প্রথম মিছিল বের করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এরপর ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে এবং ১৬ জুলাই দেশব্যাপী ৬ জন নিহতের প্রতিবাদে ১৭ জুলাই আবারো হাজীগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে।
এদিন শিক্ষার্থীদের সাথে সরকারি দলীয় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মূলত এদিন থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এরপর গত ১৮ ও ১৯ জুলাই হাজীগঞ্জে টোরাগড় ও এনায়েতপুরে সংঘর্ষ এবং কাজীরগাঁওয়ে একটি কাভার্ডভ্যানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক সপ্তাহ পর ওই কাভার্ডভ্যানের হেলপার মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় চারটি মামলা দায়ের এবং আসামি হন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
পরবর্তীতে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করেন। এই আন্দোলনের প্রথম দিন ৪ আগস্ট হাজীগঞ্জে ছাত্র-জনতার সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পৌরসভাধীন টোরাগড় গ্রামের ছাত্রদল নেতা হিমেলের বাবা আজাদ সরকারকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন দুর্বৃত্তরা।
পরে এদিন রাতে আজাদ সরকার কুমিল্লা একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাকে কুপিয়েছেন। এই খবরে আন্দোলনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। আন্দোলনের শুরু রোববার বেলা ১১টা থেকে সোমবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত সড়ক সড়ক আন্দোলনকারীদের দখলে থাকে। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার মাধ্যমে শেষ হয়।

০৬ আগস্ট, ২০২৪।