৩৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ফরিদগঞ্জ জনকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শাহজাহান গ্রেফতার

 

আ. ছোবহান লিটন :

ফরিদগঞ্জ জনকল্যাণ সমবায় সমিতি (জিএফএল) এর প্রকল্প চেয়ারম্যান শাহজাহানকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। তার বিরুদ্ধে ৩৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার ২নং আসামি তার স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে অস্থায়ী জামিন দিয়েছে আদালত।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে সমবায়ের সনদ নিয়ে মো. শাহজাহান, মো. আলকায়েত হোসেন, মো. মিজানুর রহমান, মো. মোরশেদ আলম ও মো. মাহাবুবর রহমান যৌথভাবে ফরিদগঞ্জ জনকল্যাণ সমবায় সমিতি লিঃ-জিএফএল (রেজি. নং ৫৯৬/চাঁদ/০৪) এর কার্যক্রম চালু করেন। প্রাথমিকভাবে কার্যক্রমে সদস্য সংগ্রহ, আমানত সংগ্রহ ও ঋণ দান কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে উপজেলাব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। পর্যায়ক্রমে একের পর এক প্রকল্প শুরু করেন। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ফরিদগঞ্জ মেডিকেল সেন্টার, জিএফএল সুজ ফ্যাক্টরী, জিএফএল প্রোপার্টিজ, জিএফএল পিভিসি পাইপ কারখানা ইত্যাদি। প্রতিটি প্রকল্পের পরিকল্পনাকারী ও বাস্তাবায়নকারী হিসাবে প্রধান দায়িত্ব পালন করেন প্রকল্প চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান। বাকি ৪ জন শেয়ারদারকে নামমাত্র দায়িত্ব দিয়ে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কৌশলে কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন শাহজাহান।

এক পর্যায়ে নিজের স্ত্রীকে প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক বানিয়ে নেন তিনি। এতে তার অর্থ আত্মসাতের পথ আরো সুগম হয়। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় এসে কোটি কোটি টাকা আমানতকারীদের আমানতের লভ্যাংশ ও আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠান। এতে প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার গ্রাহক প্রতিষ্ঠানে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। উপায়অন্ত না পেয়ে এক পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক সবকিছু ফেলে তারা পালিয়ে যায়।

পরে শাহজাহান ছাড়া বাকি ৪ সদস্য মো. আলকায়েত হোসেন, মো. মিজানুর রহমান, মো. মোরশেদ আলম ও মো. মাহাবুবর রহমান সমিতির বিপুল অংকের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা সমবায় কর্মকর্তাকে জানান। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা সমবায় কর্মকর্তা সমিতির সব হিসাব পর্যালোচনা করেন। এতে আত্মসাতের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। জেলা সমবায় কার্যালয়ে বিষয়টি শুনানীর আগে অভিযুক্ত শাহজাহানকে বারবার নোটিশ করার পরও তিনি উপস্থিত হননি। পরে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর জেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম অভিযুক্ত শাহজাহান কর্তৃক বিভিন্ন খাতে সর্বমোট ৩৪ কোটি ৮০ লাখ একশত উনত্রিশ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে প্রতিবেদন দেন। এতে তার স্ত্রী (সম্পাদক) হিসাবে তাকে আত্মসাতে সহযোগিতা করেন।

জেলা সমবায় কর্মকর্তার আদেশের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মো. শাহজাহানকে ১নং আসামি করে ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- সিআর-১৫৯/১৭। ঐ মামলায় ৩ ও ৪নং আসামি মাইন উদ্দিন (ম্যানেজার) ও শ্রীকৃষ্ণ দাস (ক্যাশিয়ার) জামিনে থাকলেও ১ ও ২ নং আসামি শাহজাহান ও তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে শাহজাহান ও তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম চাঁদপুরের সিনিয়ার জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালত-৩ ও আমলী আদালত ফরিদগঞ্জে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালতের বিচারক শফিউল আজম প্রধান আসামি শাহজাহানের জামিন না মঞ্জুর করেন। অপর আসামি তার স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে অস্থায়ীভাবে জামিন দেন বিচারক।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আলকায়েত হোসেন বলেন, আমাদের সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন কৌশলে পরিকল্পিতভাবে শাহজাহান প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করে। এতে আমিও ব্যক্তিগতভাবে আমার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে কিছু কিছু গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করি এবং আজ পর্যন্ত পরিবার-পরিজন ত্যাগ করে যাযাবরের মত দিন অতিবাহিত করছি। তার বিচার অবশ্যই হবে এবং সাধারণ মানুষের আমানতের টাকা ফেরত পাবে ইনশাল্লাহ।

অভিযুক্ত শাহজাহান গ্রেফতারের খবর ফরিদগঞ্জে ছড়িয়ে পড়লে শতশত আমানতকারী গ্রাহক খোঁজ খবর নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা ২নং আসামি শাহজাহানের স্ত্রী বাবেয়া বেগমের জামিন পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আমানতকারীরা তাদের আমানতের টাকা ফেরত পাওয়াসহ বিপুল অর্থ আত্মসাতকারী শাহজাহানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।