ইল্শেপাড় রিপোর্ট
চাঁদপুর শহরতলীর বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (বিশেষ করে কিন্ডারগার্টেনে) শিশুদের হেপাটাইটিস ‘এ’ ভ্যাকসিন প্রয়োগের নামে ‘প্রতিবন্ধী উন্নয়ন যুব সংস্থা’ নামীয় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠছে। জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটি চাঁদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের হেপাটাইটিস ‘এ’ ভ্যাকসিন কম খরচে প্রয়োগ করে আসছে। তাদের ভ্যাকসিন কতটা জনস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বা কতটা হুমকির তা নিশ্চিত হতে পারছেন না অভিভাবকরা। ফলে তাদের কর্মকা- নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি জেলা সিভিল সার্জন বিষয়টি মনিটরিং করছে কি-না তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐ ‘প্রতিবন্ধী উন্নয়ন যুব সংস্থা’টির চাঁদপুরে কোন নির্ধারিত অফিস নেই। তবে তাদের প্যাডে মূল অফিস দেখানো হয়েছে রাজধানী ঢাকার বাড্ডা এ্যামিলি হাউজ। এছাড়া কুমিল্লার বিশ্ব রোডের পদুয়ার বাজারের আর কে ভৌমিক ম্যানশনে রয়েছে শাখা অফিস। তবে অদৌও তাদের এমন অফিস আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি চাঁদপুর সদর উপজেলায় প্রায় ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজারের বেশি শিশু শিক্ষার্থীকে হেপাটাইটিস ‘এ’ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যানারে ৩/৪ জন করে ব্যক্তি বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেনে গিয়ে শিশুদের হেপাটাইটিস ‘এ’ নামীয় ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করে থাকে। পরে তারা সেখানে সেমিনারের আয়োজন করে।
ঐ সেমিনারে তারা শিক্ষক ও অভিভাবকদের জানায় মাত্র ১শ’ টাকায় ধহঃর (যধা) ঃবংঃ করার মাধ্যমে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রথমে তাদের রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১দিন পর রক্তের রিপোর্টের ভিত্তিতেই কেবল ভ্যাকসিন পুশ করা করা হয়। শিক্ষার্থীরা ১শ’ টাকা ও রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত প্রদান করলে তারা সব রিপোর্ট নেগেটিভ দেখিয়ে শিক্ষার্থী প্রতি ৩শ’ টাকার বিনিময় হেপাটাইটিস ‘এ’ নামীয় ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে।
তবে চাঁদপুরের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঐ ধহঃর (যধা) ঃবংঃ মাত্র ১শ’ টাকায় করা সম্ভব নয়। তার জন্য ন্যূনতম ৫শ’ টাকার প্রয়োজন। তাহলে ‘প্রতিবন্ধী উন্নয়ন যুব সংস্থা’ কিভাবে ১শ’ টাকায় এ পরীক্ষা করে তা নিয়ে চিকিৎসকরা প্রশ্ন রাখেন। তারা আরো জানান, সরকারি কিংবা বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে হেপাটাইটিস ‘এ’ ভ্যাকসিন শিশুদের (১ বছর হতে ১৮ বছর পর্যন্ত) ৬শ’ টাকা এবং (১৮ বছরের উর্ধ্বে) ১ হাজার টাকায় দিতে হয়।
এদিকে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের হেপাটাইটিস ‘এ’ ভ্যাকসিন ৪টি করে ডোজ নেয়ার জন্য নির্দেশিকা প্রদান করে তাদের অভিভাবকদের। প্রথম ডোজটির পর, ২য় ডোজ ১মাস পর, ৩য় ডোজ ২মাস পর এবং ৪র্থ ডোজ ১বছর পর। এ যেন এক ব্যবসায়িক ফাঁদ।
তবে চিকিৎসকরা দাবি করছেন, রক্তের রিপোর্ট নেগেটিভ হলে হেপাটাইটিস ‘এ’ ভ্যাকসিন ২ ডোজে দিতে হয়। প্রথম ডোজের পর ২য় ডোজ ৬ মাস পর দিতে হয়।
চিকিৎসকরা আরো জানান, যে কোম্পানীর উৎপাদিত হেপাটাইটিস ‘এ’ ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয় নিয়মানুযায়ী পরের ডোজের জন্য ঐ কোম্পানির একটি ভ্যাকসিন রেকর্ড কাড প্রদান করতে হয়। যা কোম্পানির ভেরিফিকেশন পরিচয় বহন করে।
চিকিৎসকদের এমন দাবির বিপরীতে অভিযুক্ত প্রতিবন্ধী উন্নয়ন যুব সংস্থাটি হেপাটাইটিস ‘এ’ ভ্যাকসিন দেয়ার পর তারা তাদের নিজস্ব রেকর্ড কার্ড দেয়, যা কোন কোম্পানীর নয় বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠছে, অভিযুক্ত ‘প্রতিবন্ধী উন্নয়ন যুব সংস্থা’টি চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিস থেকে অর্থের বিনিময়ে একটি অনুমোদনপত্র সংগ্রহ করে। যার মাধ্যমে তারা তাদের এমন ব্যবসা অব্যাহত রাখতে পারে। যার স্মারক নং সি,এস/চাঁদ/শা-ইপিআই/২০১৮/১৫১৮/১০। এমনকি সদর উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার অভিযোগ উঠছে।
চাঁদপুরে কর্মরত বেশ কয়েকজন চিকিৎসক জানান, হেপাটাইটিস ‘এ’ ভ্যাকসিন ৩টি কোম্পানী বাজারজাত করে থাকে। কোম্পানীগুলো হলো- গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লিন (বিদেশী), ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিকেল এবং পপুলার। তবে পপুলার কোম্পানী হেপাটাইটিস ভ্যাকসিন ‘বি’ বাজার করলেও ‘এ’ ভ্যাকসিন বাজারজাত শুরু করেনি।
ইতোমধ্যে ‘প্রতিবন্ধী উন্নয়ন যুব সংস্থা’টি সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন, সফরমালীর দি রোজ মডেল একাডেমী, নুরুল্লাহপুরের মোহাম্মদ হোসেন আদর্শ কিন্ডারগার্টেন, কুমারডুগী এলাকার বিলকিস সুলতানা একাডেমী, মধ্য লোধেরগাঁও এলাকার পপুলার মডেল কিন্ডারগার্টেন, তরপুরচন্ডীর জি এম ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন তরপুরচন্ডী আদর্শ শিশু একাডেমী, আনন্দবাজারের আল মঞ্জিল একাডেমী, মহামায়া শিশু শিক্ষা নিকেতন, নুরুল্লাহপুর আমেনা একাডেমী, মনোয়ারখাদী এস ইসলাম কেজি স্কুল, তরপুরচন্ডী মালেক স্মৃতি একাডেমী, সেনের দিঘীরপাড়ের বিসমিল্লাহ মডেল একাডেমী, দাসাদী এলাকার মর্ডাণ শিশু একাডেমী, নুরুল্লাহপুর হক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থীদের হেপাটাইটিস ‘এ’ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা ‘প্রতিবন্ধী উন্নয়ন যুব সংস্থা’র দায়িত্বরতদের কাছে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে, তাদের কর্মকর্তা আতাউল ইসলাম, নিশাত, সোহেলরাই হেপাটাইটিস ‘এ’ ভ্যাকসিন সম্পর্কে অবগত নয় বলে জানান। তবে তারা দাবি করেন, আপনারা ‘প্রতিবন্ধী উন্নয়ন যুব সংস্থা ও সিভিল সার্জন’ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
তবে চিকিৎসকদের মতে প্রতিষ্ঠানটি অল্প টাকায় টেস্ট ও ভ্যাকসিন দেওয়ার নামে শিক্ষার্থীদের শরীরে ডিস্ট্রিল ওয়াটার (পানি) প্রয়োগ করেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে এসব কথিত ‘প্রতিবন্ধী উন্নয়ন যুব সংস্থা’টি নজরদারিতে আনতে সিভিল সার্জন অফিসকে অনুরোধ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
- Home
- স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
- চাঁদপুরে ভ্যাকসিনের নামে প্রতারণা
Post navigation
