দেবপুরে আ.লীগের সাইনবোর্ড টানিয়ে দোকানঘর দখলের চেষ্টা

 

হাজীগঞ্জ ব্যুরো
হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের দেবপুর বাজারে রাতের আঁধারে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সাইনবোর্ড টানিয়ে দোকান-ঘর দখল চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজিব ওয়াজেদ জয় ও হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি আসনের সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের ছবি সম্বলিত সাইনবোর্ড টানিয়ে দোকানঘর দখলে চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী হাফেজ মো. হানিফ।
গত ২৯ মার্চ রাতে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র বাকিলা ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে এই দোকানঘর দখলের চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে দোকান-ঘরের মালিক ইমার্জেন্সী ফোন ‘৯৯৯’ নম্বরে কল দিয়ে সহযোগিতা চাইলে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোকানঘর দখলের চেষ্টাকারী ৭ জনকে আটক করে থানা নিয়ে আসে।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, দেবপুর বাজারে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে বাকিলা ইউনিয়নের চতন্তর গ্রামের মোল্লা বাড়ির আবুল খায়ের মোল্লা, আনোয়ার হোসেন, জাকির হোসেনসহ ১০/১৫ জন লোক নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় হাফেজ মো. হানিফের দোকানঘর দখলের চেষ্টা করে এবং দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরে দোকানঘরের মালিক ৯৯৯ ফোন দিলে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ৭ জনকে আটক করে। এসময় অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে যাচাই-বাছাই করে আবুল খায়েরের ছেলে জাকির হোসেন ও লালু মিজির ছেলে সুজনকে আদালতে পাঠায়।
এ ঘটনার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজিব ওয়াজেদ জয় ও মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের ছবি ব্যবহার করে স্থানীয় নুরু দরবেশের ছেলে বিএনপি নেতা তাজুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম বেপারীর ছেলে আব্দুল মালেক বাবুর্চি, লালু মিয়ার ছেলে হাবীব, মহমায়ার রনিসহ ১৫/২০ জন লোক আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সাইনবোর্ড টানিয়ে আবারো দোকানঘর দখলের চেষ্টা করে। এদিকে এ ঘটনাটি সরকার ও আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট করার পাঁয়তারা বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান।
এ বিষয়ে দোকানঘরের মালিক হাফেজ মো. হানিফ জানান, আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমার সম্পত্তি আমাকে বুঝিয়ে না দিয়ে উল্টো আমার দোকানঘর দখলের পাঁয়তারা করে আসছে আনোয়ার হোসেন ও জাকির হোসেন। এ নিয়ে আমি গতবছরের ৯ ডিসেম্বর আদালতে মামলা দায়ের করি। সেই মামলায় হাজীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন চাওয়া হয়। গত ২৮ মার্চ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৭৭/২০২১ মামলার (১৪৫ ধারা) এর তপশিল বর্ণিত ভূমির প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার সরজমিনে তদন্ত না করে এবং আমাকে না জানিয়ে একতরফা প্রতিবেদন দাখিল করে। সেই প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে এবং কোন প্রকার আদালতের রায় দেওয়ার আগেই রাতের আঁধারে আমার দোকানঘর দখলের চেষ্টা করে আনোয়ার ও জাকির গং। এ বিষয়ে দোকানঘরের ভাড়াটিয়া ইব্রাহিম খলিল থানায় মামলা করতে গেলে মামলার পরিবর্তে অভিযোগ নিয়ে ৩ এপ্রিল থানায় একটি মালিস হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সালিস না হওয়ায় আমি আদালতের আশ্রয় নিবো।
অপরদিকে দোকানঘর দখলের ঘটনায় জাকির হোসেন ও আনোয়ার হোসেন জানান, আমরা হাফেজ মো. হানিফের কাছ থেকে ৩টি দলিলে মোট ৬ শতাংশ সম্পত্তি (ভূমি) ক্রয় করি। সেই ক্রয়কৃত সম্পত্তি আমাদের বুঝিয়ে না দেয়ার কারণেই আমরা দখলে যাওয়ার চেষ্টা করি।
ভাড়াটিয়া ইব্রাহিম খলিল জানান, আমি হাফেজ মো. হানিফের কাছ থেকে ৪ বছর ধরে দোকান ভাড়া নিয়ে চালিয়ে আসছি। গত ২৯ মার্চ রাতে জাকির হোসেন ও আনোয়ার হোসেনসহ ১০/১২জন লোক দোকানে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়। এসময় তারা ২ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে এবং দোকানের ক্যাশ থেকে নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লুট এবং অন্যান্য মালামালসহ প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে। এ নিয়ে হাজীগঞ্জ থানায় আমি এজাহার দিলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ জানান, ২৯ মার্চ রাতে ‘৯৯৯’ এর কলের সূত্র ধরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে ২ জন আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় দোকানঘরের ভাড়াটিয়া ইব্রাহিম খলিল লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
০৪ এপ্রিল, ২০২১।