কচুয়ার ভূঁইয়ারা উবিতে নিয়োগ জালিয়াতি

১. একজনের পরীক্ষায় অন্যজনের অংশগ্রহণ।
২. বিদ্যালয়ের সভাপতির ছেলেসহ দু’জনের কোন একাডেমিক সনদপত্র না থাকা।
৩. নিয়োগ বোর্ডের পছন্দের প্রার্থীর কাছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস।
৪. লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল সাথে-সাথে প্রকাশ করার কথা থাকলেও করা হয় ২ দিন পর।

মো. ফয়সাল আহম্মেদ
কচুয়ার ভূঁইয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিনব নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ জানিয়েছেন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী কয়েকজন চাকরি প্রত্যাশী।
অভিযোগে জানা যায়, বিদ্যালয়ে মোট ৫টি শূন্য পদের জন্য গত ১৩ অক্টোবর দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে গত ৩০ নভেম্বর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন নিয়োগ বোর্ডের পছন্দের প্রার্থী শাহাবউদ্দীন নামের এক চাকরী প্রত্যাশীর কাছে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেয়া হয়। ঐ প্রশ্নপত্রে নিয়োগ পরীক্ষায় শাহাবউদ্দীনের হয়ে অংশগ্রহণ করেন তার ভাই মো. আলাউদ্দিন। বর্তমানে যিনি ভূঁইয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী হিসেবে কর্মরত। তাছাড়া বিদ্যালয়ের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল মবিন হোসেনের ছেলে মো. মেহেদী হাসান তুহিন লেখাপড়া না করলেও নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং তাকে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল সাথে-সাথে দেওয়ার কথা থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ২ দিন পর।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, যোগ্য ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ও নিয়োগ বোর্ডের ব্যক্তিরা অযোগ্য ব্যক্তিকে বিদ্যালয়ের চাকরিতে নিয়োগ প্রদান করেন। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের সভাপতির ছেলে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মো. মেহেদী হাসান তুহিন বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কলাপসিবল গেটের কাছে টেবিলে বসে আছে। কাছে গিয়ে তার নাম কয়েকবার জিজ্ঞাস করলেও উত্তর দেয়নি সে। তারপর উচ্চস্বরে কয়েকবার তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করলে, ঠিকমতো তার নিজের নামটিও বলতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর তার নাম ও ঠিকানা খাতায় লিখতে দিলে, সে তার নাম ও ঠিকানা সম্পূর্ণ লিখতে পরেনি।
তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৫টি পদের মধ্যে ল্যাব সহকারী পদে মো. মহিউদ্দীন, অফিস সহকারী পদে মো. রিয়াদুল হাসান রাজন, নিরাপত্তা কর্মী পদে মো. মেহেদী হাসান তুহিন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে লিটন চন্দ্র ও নৈশপ্রহরী পদে মো. শাহাবউদ্দীনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এতে দেখা যায়, শাহাবউদ্দীন ও সভাপতির ছেলে মেহেদী হাসান তুহিন কোনদিন কোন স্কুলে লেখাপড়া করেনি। আরো অবাক করা তথ্য হচ্ছে, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সেই নিরাপত্তা কর্মী মেহেদী হাসান তুহিন ও নৈশ প্রহরী শাহাবউদ্দীনকে এই বিদ্যালয় থেকে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হাতে লেখা অষ্টম শ্রেণির সনদ দেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগকারী মো. আবু সালেহ, মো. হাবিবউল্লাহ, মো. শাহ জালাল, মো. রাসেল হোসেন ও ইকবাল হোসেন প্রায় একই সুরে বলেন, এই নিয়োগ পরীক্ষায় শতভাগ অনিয়ম হয়েছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে সভাপতি নিজের ছেলে ও অন্যদের সঠিক যোগ্যতা না থাকার স্বত্বেও বিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছেন। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে আরো বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তিনি এই ধরনের অনিয়ম কীভাবে করলেন? আমরা প্রশাসনের কাছে এই পাতানো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পুনরায় আবার নিয়োগ দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাই।
এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজ দাবি করেন, একটি মাধ্যমিক পর্যায়ে বিদ্যালয়ে এ ধরনের অনিয়ম এখনই মেনে নেওয়া যায় না। তারা প্রশাসনের কাছে তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। যাতে এই ধরনের অনিয়ম করতে আর কেউ সাহস না পায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন সুলতানা বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছতার মাধ্যমেই হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের একাডেমিক সনদ না থাকা ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করলে তিনি আরো বলেন, গঠিত নিয়োগ বোর্ড সব কিছু যাচাই-বাছাই করে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন এবং আমাদের বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার তথ্য আমার জানা নেই।
নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ডা. মাদুস বলেন, সব শর্ত মেনেই নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এ নিয়োগ পরীক্ষায় বিন্দুমাত্র ত্রুটি নেই, এটা আমি হলফ বলে বলতে পারি। যারা এ ধরনের একটি স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিভিন্ন স্থানে আবেদন করেছেন তাদের উদ্দেশ্য কখনই সফল হবে না।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল মবিন বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া সব নিয়মকানুন মেনেই হয়েছে। অভিযোগকারীদের অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই বলে তিনি উড়িয়ে দেন। তিনি আরো বলেন, আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে কয়েকজন ব্যক্তি উঠে-পরে লেগেছে, এটা আর বেশি কিছু নয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল হাসান বলেন, ভূঁইয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি এবং উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, যা তদন্ত চলমান।

২৫ ডিসেম্বর, ২০২২।