ইলশেপাড় ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ (৮৩) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার একান্ত সচিব (পিএস) মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন।
মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।
উপদেষ্টার দপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দুপুরে বাসায় খাবার খেতে বসলে হঠাৎ তিনি পড়ে যান। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন। বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
হাসান আরিফের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ল্যাবএইড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা চৌধুরী মেহের-এ-খোদা দ্বীপ বলেন, বিকেল তিনটার দিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। যতটুকু জানতে পেরেছি তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন। এখনও তার মরদেহ ল্যাবএইড হাসপাতালেই আছে।
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন এ এফ হাসান আরিফ। একই দিনে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ওইদিন তাকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ১০ নভেম্বর উপদেষ্টাদের দপ্তর পুনর্বণ্টন করে সরকার। ওইদিন ভূমি মন্ত্রণালয় তার অধীনে রাখা হলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে তাকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এ এফ হাসান আরিফ ২০০১ থেকে ২০০৫ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এ এফ হাসান আরিফ ১৯৪১ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর স্নাতক এবং এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্টে ১৯৬৭ সালে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। এরপর ঢাকায় এসে বাংলাদেশ হাইকোর্টে কাজ শুরু করেন।
এ এফ হাসান আরিফ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ, নির্মাণ সালিস, বাণিজ্যিক সালিস, অর্থ, ব্যাংকিং এবং সিকিউরিটিজ বিষয়, করপোরেট, বাণিজ্যিক ও ট্যাক্সেশন বিষয়, সাংবিধানিক আইন বিষয়, পাবলিক আস্বাদন, আরবিট্রেশন এবং বিকল্প বিরোধ সমাধানের অন্যান্য পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন।
প্রধান উপদেষ্টার শোক : ভুমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার বিকেলে দুবাই থেকে ঢাকায় অবতরণের পরপরই উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন তিনি। প্রয়াত উপদেষ্টাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিমানবন্দর থেকে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে ছুটে যান প্রধান উপদেষ্টা।
এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার আকস্মিক মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। উপদেষ্টা হাসান আরিফ একজন শীর্ষ আইনজীবী। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন।
বাংলাদেশের সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল দীর্ঘদিন ধরে আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ২০০৮ সাল থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বলেন, হাসান আরিফ একজন আইনজীবী হিসেবে এবং ভিন্নমতাবলম্বী, ভিন্নমতের কণ্ঠস্বর ও আমাদের সমাজের প্রান্তিক মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় তার সক্রিয় ভূমিকার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
প্রধান উপদেষ্টা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪।