রাজরাজেশ্বরে আগুনে পুড়েছে ২ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ভষ্মীভূত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাশগারি চর খান বাজারে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মুদি, কসমেটিক্স, তৈরি পোশাক, গ্যাস সিলিন্ডার, ফ্রিজসহ সমস্ত মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত দুটি দোকানের ব্যবসায়ীরা হলেন- স্থানীয় নুর মোহাম্মদ বন্দুকশীর ছেলে মো. নজরুল বন্ধকশীর ও আব্দুর রহমান মোল্লার ছেলে মো. কামাল মোল্লা। খবর পেয়ে রাতেই আশপাশের ব্যবসায়ী ও গ্রামবাসী ছুটে এসে পার্শ্ববর্তী খাল থেকে হাতে এবং পাম্প মেশিন দিয়ে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে করে বাজারের ১৫ থেকে ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন থেকে রক্ষা পায়।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী নজরুল বন্ধকশী বলেন, বহু বছর ধরে আমি এই বাজারে ব্যবসা করছি। আমার দোকানে মুদি, কসমেটিক্স এবং সিলিন্ডার গ্যাসসহ বিভিন্ন মালামাল ছিল। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় দোকান বন্ধ করে বাড়িতে যাই। রাত ১টার দিকে খবর পাই আমার দোকানে আগুন লেগেছে। ছুটে এসে দেখি দোকানে আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলছে। চোখের সামনে আমার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেল। অগ্নিকাণ্ডে তার প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা মালামাল পুড়ে গেছে বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ী নজরুলের স্ত্রী সাথী বেগম বলেন, আমার স্বামী ধার-দেনা এবং কিস্তি উঠিয়ে এই দোকানটি চালাতো। এই দোকান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে আমাদের বড় একটি পরিবার চলতো। আজ আমরা পথের ফকির হয়ে গেলাম। তিনি জেলা প্রশাসক, ইউএনও এবং ইউনিয়নের প্রশাসক মহোদয়ের কাছে সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কামাল মোল্লা বলেন, চোখের সামনেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অল্প অল্প করে সঞ্চয় করা অর্থ দিয়ে এই দোকানটি আমি গড়ে তুলেছি। এর সাথে অনেক টাকা কিস্তি উঠিয়ে দোকান বড় করেছি। দোকানের ফ্রিজ বিদ্যুতের মিটার, মালামাল, আসবাবপত্র, সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। খেয়ে পড়ে বাচবার মতো আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সরকারি সাহায্য না পেলে আমাকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে পথে বসতে হবে।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বাচ্চু বেপারী, বাজারের মালিক মো. মজিবুর রহমান খান, বহু বছরের পুরনো এই বাজারে ১৫ থেকে ২০টি দোকান রয়েছে। এক রাতের অগ্নিকাণ্ডে বাজারের দুটি বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাজারের ব্যবসায়ী এবং গ্রামের নারী পুরুষরা যদি তাৎক্ষণিক পানি ছিটিয়ে আগুন না নিভাত, তাহলে বাজারের একটি দোকানও অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পেত না। বদু নামের স্থানীয় এক লোক বুদ্ধি খাটিয়ে পাম্প মেশিন দিয়ে পাশের খাল থেকে পানি উঠিয়ে আগুনে ছিটিয়েছিল বলে জানান তারা।
এলাকায় মুরুব্বী হেদায়েত উল্লাহ বন্দুকশী ও শাহজালাল বন্দুকশী বলেন, বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বড় দোকানগুলোর মধ্যে অন্যতম এই দুটি দোকান। এখানে মুদি, কসমেটিক, ডিজেল, গ্যাস সিলিন্ডারসহ গ্রামের মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় সব মালামাল বিক্রি করা হতো। এক রাতের আগুনে তাদের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমরা জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসকের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, যেন এই পরিবার দুটোকে সরকারিভাবে সহায়তা করা হয়। তারা যাতে সরকারি সহায়তা নিয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এই দুটি দোকানের উপার্জিত অর্থের উপর নির্ভর করে তাদের পরিবারগুলো খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে।

১৯ জানুয়ারি, ২০২৫।