এস এম সোহেল
চাঁদপুর পৌরসভার স্বর্ণখোলা এলাকায় অবস্থিত ময়লা ড্রাম্পিং স্থানে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার ধবল বকের এক অনন্য আশ্রয়স্থল। পরিবেশের বিপরীতে গিয়ে প্রকৃতির এই আশ্চর্যজনক বিস্ময় জাগিয়েছে স্থানীয়দের মনে।
চাঁদপুর পৌরসভার বর্জ্য ফেলার এই স্থানটি শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, সেখানে দেখা যাচ্ছে বিপুলসংখ্যক ধবল বকের আনাগোনা। সাধারণত এই প্রজাতির বক জলাশয়ের আশপাশে বিচরণ করে, তবে এখানে তারা দল বেঁধে আশ্রয় নিয়েছে, যা বিশেষজ্ঞদের কাছেও বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শহরের স্বর্ণখোলা পৌরসভার ময়লা ড্রাম্পিং স্থানে অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে হাজারো বকের। প্রতিবছর শীতে মাইলের পর মাইল ছুটে এসে সৃষ্টি হয়েছে এই অভয়ারণ্যে। দেখে মনে হচ্ছে কোনো চিত্রশিল্পী যেন তার সুনিপুণ হাতে সাদার মহোৎসবে দিলখোলা হয়ে এঁকে রেখেছে শুভ্রনয়নী কোনো মানবীর অবয়ব। দূর দেশ থেকে ডানায় ভর করে আসে একটু আশ্রয় ও খাদ্যের আশায়।
সাদা বকের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে স্বর্ণখোলা পৌরসভার ময়লা ড্রাম্পিং এলাকা। প্রকৃতির বুকে পাখির ডানা ঝাপটানো শব্দ আর কিচির-মিচির ডাকে সকাল-সন্ধা মুখরিত থাকে পুরো এলাকা। প্রকৃতির নতুন রুপ আর সাদা বকের বিচরণে আকৃষ্ট করছে সকলকে। খোলা আকাশে কয়েক চক্কর মেরে বসে পড়ে পৌরসভার ময়লাস্তূপে। এখানে না গেলে বোঝা যাবে না কতটা সুন্দর দৃশ্য। এদের সারিবদ্ধ ছুটোছুটির মূহূর্তগুলোও ছিলো দেখার মতো।
‘জীবনানন্দ দাশের’ কবিতায় খোঁজ মিলে এই ধবল বকের। সাঁঝের বেলায় নীড়ে ফেরা কিংবা দল বেঁধে সুবজ ধান ক্ষেতে বসার দৃশ্য আকৃষ্ট করে ভ্রমণ পিপাসুদের। প্রকৃতিতে শুভ্রতা ছড়ানো সাদা বক দল বেঁধে নিঃশব্দে চলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বকের দল খাবারের সন্ধানে ডানা মেলে উড়ছে খোলা আকাশে। বিভিন্ন জলাশয়, পুকুর, ডোবা আর নদীতে ভেসে বেড়ায় সাদা বকে দল। তাদের কিচির-মিচির শব্দে মোটেই বিরক্ত নয় স্বর্ণখোলা এলাকাবাসীরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় ধবল বকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা প্রতিদিন সাদা বকের আনা-গোনা, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ানো আর কিচির-মিচির শব্দ দারুণভাবে উপভোগ করি। সারাদিন হাজারো বক দলবদ্ধভাবে উড়ে এসে আশ্রয় নেয়, যা এক অনন্য দৃশ্য তৈরি করে। কেউ কেউ বলছেন, এখানে বর্জ্যের সঙ্গে খাদ্যের প্রাচুর্য থাকার কারণে বকগুলো নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছে।
চাঁদপুর পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ময়লা ফেলার এই স্থানটি একদিকে যেমন পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে এটি প্রকৃতির একটি আশ্চর্যজনক বৈচিত্র্যও তৈরি করেছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখানে উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যাতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা যায়।
পরিবেশবিদদের মতে, এই ধরনের অভয়ারণ্য রক্ষা করা দরকার, কারণ এটি স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে, যদি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা হয়, তাহলে বকগুলোর জন্য বিকল্প আশ্রয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে তারা নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারে।
স্থানীয়দের অনেকেই চান, চাঁদপুর পৌরসভা এই স্থানটিকে একটি সুরক্ষিত অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলুক, যেখানে প্রকৃতি ও মানুষ একসঙ্গে টিকে থাকতে পারবে।
৩০ জানুয়ারি, ২০২৫।