স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুর হকার্স মার্কেটে দীর্ঘ ৮ বছর উন্নয়নের নামে বিভিন্ন খাতে উত্তোলকৃত কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ করেছে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। আওয়ামী লীগের ১৬ বছর শাসনামলে তৎকালীন সভাপতি আনু লীগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির মৃধার প্রভাবে এবং ভয়ে ব্যবসায়ীরা ছিলো আতঙ্কে। তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই ঐ ব্যবসায়ীর উপর নেমে আসতো হুমকি-ধমকি, হামলা ও বিভিন্ন অজুহাতে মার্কেট থেকে উৎখাত।
চাঁদপুর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এক লিখিত পত্রে উল্লেখ করেন, দীর্ঘ প্রায় ৮ বছরে চাঁদপুর হকার্স মার্কেটে উন্নয়নের নামে বিভিন্ন খাত সৃষ্টি করে মার্কেট থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়। সেই উত্তোলনকৃত টাকা নামেমাত্র কিছু খরচ করে বাকি টাকা কখনো দেয়নি কমিটি। বিগত বছরগুলোতে আনু ও জাকির মৃধা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মার্কেট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা তুলেছে। বিগত ৫ আগস্টের আগে আনু ও জাকির মৃধার কাছে ব্যবসায়ীরা ছিলেন জিম্মি ও অসহায়। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কোন ব্যবসায়ীর ছিলো না। ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর আনু লীগের সেক্রেটারী জাকির মৃধা হয়ে যান ক্ষমতাধর বিএনপির নেতা।
জাকির মৃধার রাতের আঁধারে গঠিত বর্তমান কমিটির একজন ওয়ার্কশপ লোকানদার আলী হোসেন। সাবেক সভাপতি আনু ৫ আগস্টে পালিয়ে যাওয়ার পর ওয়ার্কশপ লোকানদার আলী মার্কেটের ১টি বিদ্যুতের মেশিন চুরি করে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে দেন। পরে তা জানাজানি হলে মালিক সমিতি অফিসে ওয়ার্কশপ লোকানদার আলী প্রকাশ্যে ক্ষমা চান এবং দ্রুত সেই মেশিন ফেরত আনবে বলে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও ৫ লাখ টাকা মূল্যের মেশিনটি ওয়ার্কশপ লোকানদার আলী ফেরত দেননি। লজ্জার বিষয় হলো জাকির মৃধা সেই আলীকে তার রাতের আঁধারে গঠিত কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক হিসেবে স্থান দিয়েছেন।
জাকির মৃধার নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট হকার্স মার্কেটে সবসময় সক্রিয় আছে। সেই সিন্ডিকেট দোকান ভাড়া, দোকান বিক্রি, বিভিন্ন কার্যক্রম করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন। সেই আত্ম্নসাৎকৃত টাকার অংশ জাকির মৃধা আনুর সাবেক পিএস আল আমিনের মাধ্যমে আনুর ব্যাংক একাউন্টে পৌঁছে দিচ্ছে।
জাকির মৃধার অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন সময় বিজ্ঞাসা করা হলে, সে বলে আমি বিএনপির একজন ত্যাগী নেতা। আমি যা করছি সব উপরের নির্দেশেই করছি।
মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আছে, জাকির মৃধা লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম খানের নির্বাচনী প্রচারণা, সভা ও সমাবেশে উপস্থিত থাকতেন।
দীর্ঘ ৮ বছরে মার্কেটের উন্নয়নের নামে উত্তোলনকৃত যেসব খাতে টাকার হিসাব আজও মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কমিটিকে দেওয়া হয়নি। সেই খাতগুলো কিছু নিচে উল্লেখ করা হলো-
* মার্কেটের গলির চাল লাগানোর নামে ২৬ লাখ টাকার হিসাব আজও দেয়নি।
* বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারে জন্য মার্কেটের ৩৭০টি দোকান থেকে ৮ হাজার টাকা হারে উত্তোলনকৃত প্রায় ৩০ লাখ টাকার হিসাব দেই-দিচ্ছি বলে দেয়নি।
* গভীর রাতে ব্যবসায়ীদের দোকানের সামনে লাগানো লোহার হেঙ্গার, রড, উপরের সানশেড ওয়ার্কশপ লোকানদার আলীর মাধ্যমে কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে সব দোকান থেকে কাটা লোহার পরিমাণ কয়েক টন। বিক্রির সাথে জড়িত ছিলো অনু লীগের কমিটির সবাই।
* হাকার্স মার্কেটের পূর্ব দিকে কাঁচা বাজার তৈরির নামে লাইসেন্স নবায়ন করার বাহানায় উত্তোলনকৃত প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
* মার্কেটের ‘বি’ ব্লকের দোকান বড় করার নামে ২৫ লাখ টাকা আত্নসাৎ।
* দীর্ঘ ৮ বছরে সমিতির পরিচালনার নামে মার্কেটের ৩৭০ দোকান থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা হারে উত্তোলনকৃত হিসাব আজও দেয়নি।
* হাকার্স মার্কেটের শেষ মাথায় (পূর্ব দিকে) মসজিদের নাম করে দোতলা নির্মাণ করে দোকান আনু-জাকির কমিটির কোটি কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছে। যার হিসাব আজও কেউ সুনির্দিষ্টভাবে কেউ পায়নি। দোতলা মসজিদের মার্কেট নিয়ে দুদক/সিআরবি চট্টগ্রাম এবং হাইকোর্টে মামলা তদন্তনাধীন ও চলমান রয়েছে।
মার্কেট থেকে বিভিন্ন খাতে উত্তোলনকৃত টাকার হিসাব আনু লীগ ও জাকির মৃধার কাছে চাইলে সেই ব্যবসায়ীর জীবনে নেমে আসে হুমকি-ধমকি, হামলা ও বিভিন্ন অজুহাতে মার্কেট থেকে উৎখাত। আনু লীগ ও জাকির মৃধার দীর্ঘ দিন মার্কেট থেকে বিভিন্ন খাতে উত্তোলনকৃত জাকির হিসাব নেওয়া এবং হিসাব না দিতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেন হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ীরা।
আনু লীগ ও জাকির মৃধার দীর্ঘদিনের অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে মার্কেটে একটি সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল, জবাবদিহিমূলক কমিটি গঠন করার জন্য প্রশাসন ও রাজনৈতিক শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
১৩ মার্চ, ২০২৫।