এস এম সোহেল
নিরাপত্তাহীনতা ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন জরাজীর্ণ ভবনে শিক্ষাগ্রহণ করছে শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কুমারডুগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোমলমতী শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েকবার আবেদন করেও নতুন ভবনতো দূরের কথা পুনঃসংস্কার হয়নি।
জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ২৭নং কুমারডুগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি জরাজীর্ণ এক কক্ষবিশিষ্ট ভবনে দীর্ঘদিন পাঠদানের পর ২০১০ সালে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ একটি শিক্ষক মিলনায়তনসহ ৩ কক্ষবিশিষ্ট ১টি একতলা ভবন নির্মাণ করে দেয়। নি¤œমানের কাজের কারণে কয়েক বছর যেতে না যেতে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও আস্তর খসে পড়তে দেখা যায়। সামান্য বৃষ্টিতে ভবনের ছাদ চুইয়ে পানি পড়তে থাকে। পানিতে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা ও বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল-পত্র ভিজে নষ্ট হচ্ছে। পাশে আছে ভাঙাচোরা টিনসেটে সেখানে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, চলছে জোড়াতালি দিয়ে পাঠদান।
ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ২ শতাধিক। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য ৩টি শ্রেণিকক্ষের একটিও ভালো নেই। সেই সাথে শিক্ষকদের বসার জন্য অফিস কক্ষেরও কোনো মিল নেই। অগোছালোভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে কোন রকমে চলছে পাঠদান কার্যক্রম।
এলাকাবাসী জানান, তারা শুনতে পেরেছে বর্তমান ইন্সপেক্টর জেনারেল অব বাংলাদেশ পুলিশ (আইজিপি) ও চাঁদপুরের কৃতী সন্তান ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটওয়ারী বিপিএম (বার) এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। তাই প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটওয়ারী এ বিদ্যালয়ের দিকে একটু দৃষ্টি দেবেন বলে এলাকাবাসীর প্রত্যাশা।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিদ খান ও মনিরা আক্তার বলে, আমাদের এই ভবন ও ভাঙাচোরা টিনসেট ঘরে পড়তে খুবই খারাপ লাগে। ভাঙাচোরা টিনের ঘরের দিকে তাকালেই মনে হয় ভেঙে আমাদের গায়ে পড়বে। প্রায়ই বৃষ্টিতে ভিজে যাই। তখন আর ক্লাশ করতে পারি না।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি শাহানারা আক্তার জানান, ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আগের চেয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। ভয়ে অনেক শিশু-শিক্ষার্থী ক্লাসে আসছে না। সামান্য বৃষ্টি হলে ভবনের ছাদ চুইয়ে পানি পড়তে থাকে। তখন ক্লাস নিতে পারি না।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. শাহ আলম খান জানান, বিদ্যালয়টি ৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে বর্তমানে ২০ শতাংশ দখলে। এই বিদ্যালয়টির ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমান বয়স ১শ’ ১৭ বছর। এতো পুরোনো স্কুলটির দিকে তাকানোর যেনো কেউ নেই। শ্রেণিকক্ষের অভাবে ও বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এলাকার শিক্ষার্থীদের স্বার্থে একটি নতুন ভবন খুবই প্রয়োজন। আমি আশা করি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বিদ্যালটির দিকে দৃষ্টি দিবেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোদেজা আক্তার মজুমদার জানান, জরাজীর্ণ ভবনটিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস ও অফিস করছি। এ বিদ্যালয়টিতে সর্বমোট ৭ জন শিক্ষকসহ ১৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তারা প্রতিদিন ভয়-ভীতির মধ্য দিয়ে ক্লাস করছে। একটু বৃষ্টি হলে বিদ্যালয় ভবনে বেয়ে পানি প্রবেশ করে। এমন পরিস্থতির মধ্য দিয়েই প্রতিদিন কোমলমতি শিশুদের পাঠদান করা হচ্ছে। বড় কোন দুর্ঘটনার আগে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে আসে, কিন্তু শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো বসার জায়গা দিতে পারি না। পাঠদান চলে জরাজীর্ণ ভবন আর টিনসেটে। তাই মাঝে মাঝে আবার কোনও কোনও বাচ্চা স্কুলেও আসতে চায় না। জিজ্ঞেস করলে বাচ্চারা বলে, ‘আমাদের স্কুলটা ভালো লাগে না। পচা ক্লাসরুমে বসতেও মন চায় না।
সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান, বিদ্যালয়টি পরির্দশন করেছি। ২টি শ্রেণি কক্ষ চলমান রয়েছে। ভবনটির এই করুণ অবস্থা সম্পর্কে আমাদের জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ শিক্ষা অধিদপ্তর অবগত আছেন। ভবনটি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে শিক্ষক-শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি।
- Home
- প্রথম পাতা
- কুমারডুগী সপ্রাবি’র শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ পাঠদান
Post navigation


