কুমিল্লার সোনাকান্দায় ৮৭তম বার্ষিক ইছালে ছাওয়াব বৃহস্পতিবার


কুমিল্লা ব্যুরো
কুমিল্লায় ঐতিহ্যবাহী সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের ৮৭তম ঐতিহাসিক ইছালে ছাওয়াব মাহফিল উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দ। গত রোববার দুপুরে জেলার মুরাদনগর উপজেলার সোনাকান্দায় বাংলাদেশ তা’লীমে হিযবুল্লাহ’র কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ তা’লীমে হিযবুল্লাহ’র কেন্দ্রিয় মহাসচিব শায়খুল হাদিস মাওলানা মোতালেব হোসাইন সালেহী, মাদরাসার মুফাচ্ছির মাওলানা রফিকুল ইসলাম ও ছানাউল্লাহ জেহাদী প্রমুখ উপস্থিত ছিলে। আয়োজকরা জানান, আগামি ২৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে দু’দিনব্যাপী এ মাহফিল।
মুরাদনগর উপজেরার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন সোনাকান্দা কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠেয় দু’দিনব্যাপী এই ইছালে ছাওয়াব মাহফিল ২৭ ফেব্রুয়ারি বাদ জোহর থেকে শুরু হবে। এতে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে ২৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার বাদ ফজর আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে মাহফিল শেষ হবে। এতে দেশ-বিদেশের ওলামায়ে কেরাম ও বিভিন্ন দরবার শরীফের পীরেরা বয়ান করবেন।
মতবিনিময় সভায় আয়োজকরা আরো জানান, ঐ মাহফিলে প্রতি বছরের মতো এবারো বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক নেতৃবৃন্দসহ পর্যাপ্তসংখ্যক মুসল্লির সমাগম হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মাহফিল উপলক্ষে দরবার শরীফের পক্ষ থেকে ৬টি পেন্ডেল ছাড়াও আগত দূরবর্তী মেহমান বৃন্দের থাকা, খাওয়া, অজু, গোছল, টয়লেট ও গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের মেটংঘর থেকে শ্রীকাইল পর্যন্ত এবং নবীপুর থেকে শ্রীকাইল পর্যন্ত রাস্তা দু’টি যানযট মুক্ত রাখতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীদের জন্য বিশেষ ও দ্রুত চিকিৎসা সেবা প্রদান ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের পীর, বাংলাদেশ তা’লীমে হিজবুল্লাহ’র আমীর অধ্যক্ষ আলহাজ মাওলানা মাহমুদুর রহমান উক্ত মাহফিলে উপস্থিত থেকে দুনিয়া ও পরকালের অশেষ ছাওয়াব হাসিল করার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী উপমহাদেশের আধ্যাত্মিকতায় প্রসিদ্ধ এ দরবার। পাক ভারত উপমহাদেশের মধ্যে দ্বীনের দাওয়াত ও খেদমতে যাঁরা আঞ্জাম দিয়েছেন তন্মধ্যে সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের দাদা হুজুর বাগদাদ ও ফুরফুরা শরীফ থেকে খেলাফতপ্রাপ্ত শাহ্সুফি আলহাজ মাওলানা হাফেজ আব্দুর রহমান হানাফি (রহ.) অন্যতম। তিনি তাঁর জীবনকে সর্বদা ইবাদত, বন্দেগী, মোরাকাবা-মোশাহাদার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির শিখরে সমাসীন হতে সক্ষম হয়েছেন। দ্বীনের উপর তাঁর আত্মত্যাগ ও সাধনা দেখে লাখ-লাখ মুসলমান তাকে অনুসরণ করেছেন। বিশেষ করে এ দেশের মুসলিম মিল্লাতের নৈতিক অধঃপতন থেকে চারিত্রিক উন্নতি ও আমলের অগ্রগতির ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তিনি তাঁর এ দাওয়াতি কাজ চালু রাখার জন্য বহুযুগ আগ থেকে তাঁর দরবারে প্রতিবছর বার্ষিক ইছালে ছাওয়াব মাহফিল প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৬৪ সালে তাঁর ইন্তেকালের পর সুযোগ্য উত্তরসুরী বড় ছাহেবজাদা শাহসুফি আলহাজ মাওলানা আবুবকর মোহাম্মদ শামসুল হুদা (রহ.) আব্বাজানের খেদমতকে অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে গোটা দেশে আঞ্জাম দিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন জেলায় তাঁদের উভয়ের প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য মাদরাসা, মসজিদ, খানকাহ, মক্তব, মুসাফির ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ২০০৫ সালে তিনি যখন ইন্তেকাল করেন তখন তাঁর সুযোগ্য বড় ছাহেবজাদা আলহাজ মাওলানা মাহমুদুর রহমান স্থলাভিষিক্ত হন। তিনিও নিরলসভাবে দেশ-বিদেশে দ্বীনের দাওয়াতি কাজ ইন্তেজামে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।