সফরমালীর শেকা কবিরাজের ছেলে ফারুকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ নারীরা
স্টাফ রিপোর্টর :
চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর ইউনিয়নের সফরমালী স্কুল সংলগ্ন শেকা কবিরাজের ও তার পরিবারের সদস্যদের দৌরাত্ম্য এখনো বন্ধ হয়নি। একাধিকবার পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ বিভিন্ন অন্যায় অপরাধের দায়ে শেকা কবিরাজ ও তার ছেলেদের আটক করলেও জামিনে এসেই তাদের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। তেমনি গত ২৭ অক্টোবর রাতে শেকা কবিরাজের ছেলে ফারুক হোসেন পার্শ্ববর্তী বকাউল বাড়িতে রাতের আঁধারে পুকুরে মাছ দেখার নামে প্রবেশ করে। ঐদিন রাত ১০টায় ফারুক বকাউল বাড়ির গ্রিল মিস্ত্রি হাবিবের অনুপস্থিতিতে তার বসতঘরে প্রবেশ করে। ওই সময় ঘরে হাবিবের স্ত্রী তার দু’সন্তান নিয়ে ঘুমিয়েছিল। তখন ওই নারীর সাথে সে অসমাজিক কাজে লিপ্ত হয়। এ সময় পার্শ্ববর্তী ঘরের রশিদের মা ও রাজন নামের আরো এক যুবক বিষয়টি টের পেয়ে বাড়িরর অন্যান্য লোকদের জড়ো করে তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে। বিষয়টি নিয়ে এখন ওই এলাকায় তোলপাড় চলছে।
বকাউল বাড়ির রশিদের মা ও বাড়ির লোকজন জানায়, পদ্মা সেতুর কাজ চলার কারণে হাবিব দীর্ঘ দিন ধরে সেখানে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছে। যার কারণে পুরো বাড়িটি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তার স্ত্রী ১ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছে। বাড়ির পাশেই একটি পুকুরে হাবিবের স্ত্রী মাছ চাষ করে। এদিকে শেকা কবিরাজের ছেলে ফারুক পাশের একটি ঝিল বর্গা নিয়ে মাছ চাষ করে। মাছের খাবার দিতে গিয়েই ওই ২ সন্তানের জননীর সাথে ফারুকের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই ফারুক রাতের আঁধারে তার ঘরে আসা-যাওয়া শুরু করে। ঘটনার দিন রাতে রশিদের মা পাশের ঘরে পান আনতে গেলে বিষয়টি টের পেয়ে যায়। অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করার পর ওই ঘরের দরজা না খোলায় বাড়ির লোকজন জড়ো হয়ে যায়। পরবর্তীতে রাত ১১টায় ফারুককে ওই ঘর থেকে বের করা হয়।
ওই নারীর একমাত্র শিশুপুত্র (৫) জানায়, তার মা লজ্জায় টর্চ লাইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে ফাটিয়ে ফেলে। বিকেলে রক্ত নিয়ে মা চাঁদপুর যায়। খোঁজ নিয়ে যায়, শিশুটির মা লোকলজ্জায় শনিবার বিকেলে স্বামীর বাড়ি থেকে নোয়াখালী বাবার বাড়িতে চলে গেছে। স্থানীয়রা ফারুক ও শেকা কবিরাজের এ ধরনের কর্মকা-ের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
কল্যাণপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল কাদের জানান, শেকা কবিরাজের অর্থের জোরে কাছে অনেক কিছুই পাড় পেয়ে যাচ্ছে। শেকা কবিরাজ ও তার ছেলেরা এলকায় নানা অন্যায় অপরাধ করে যাচ্ছে। কেউ যদি প্রতিবাদ করে তাদের সাথে সংঘর্ষ বেধে যায়। এলাকার মুরুব্বিদের টাকা দিয়ে অনেক কিছু থেকেই পাড় পেয়ে যাচ্ছে। এ পরিবারের অন্যায়ের কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। অবৈধ পন্থায় কবিরাজ দাবি করে শেকা বাড়িতে মিনি হাসপাতাল গড়ে তুলে রোগী দেখছে। যার কোন বৈধতা নেই। প্রশাসন শেকা কবিরাজকে রোগী দেখার জন্য নিষেধ করেছিলো। কিন্তু তিনি প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে রোগী দেখার নামে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর শেকা কবিরাজ তার ছেলে ফারুকসহ তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে জেলা গোয়োন্দা পুলিশ বিপুল পরিমাণ জাল টাকাসহ আটক করে। এর আগে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ শেকা কবিরাজের অবৈধ চিকিৎসালয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করেছিল। ওই সময় শেকা কবিরাজ মোচলেকা দিয়েছিল- ‘এভাবে আর তিনি বাড়ির ভেতর চিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসালয় রাখবেন না। সব কিছু বন্ধ করে দিবেন।’ কিন্তু গতকাল রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির সামনে অসংখ্য সিএনজি স্কুটার ও অটো রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান কবিরাজের কাছে এসেছেন। পরবর্তীতে বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখা যায় রোগীরা উঠানে অবস্থান করছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সাংবাদিকদের প্রবেশের কথা জানতে পেরে শেকা কবিরাজ তার লোকজন দিয়ে গেটের সামনে দাঁড়ানো সব সিএনজি স্কুটার ও অটো রিক্সা সরিয়ে দেয়। উঠানে থাকা সব রোগীকে সরিয়ে নেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সব রোগীকে শেকা কবিরাজ উঠান থেকে সরিয়ে তার চিকিৎসালয়ের কোন এক কক্ষে নিয়ে গেছেন। এমনিভাবে শেকা কবিরাজের পরিবারের অবৈধ কর্মকা- চলছে।