সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
চাঁদপুর-শরীয়তপুর দুই জেলার সেতুবন্ধনে একমাত্র বাঁধা মেঘনা নদী। এর এক প্রান্তে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট আর অন্য প্রান্তে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার আলুবাজার ফেরিঘাট। এই দুই ফেরিঘাটের মধ্যে দূরত্ব নদী ও চর মিলিয়ে মাত্র ১০ কিলোমিটার। দুই জেলা মধ্যবর্তী স্থানে নদীপথের এই ১০ কিলোমিটারে একটি সেতু বা সুড়ঙ্গপথ (ট্যানেল) নির্মাণ হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আনবে যুগান্তকারী পরিবর্তন। সেই সাথে বদলে যেতে পারে এই অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা।
উল্লেখিত সংবাদের শিরোনামে জাতীয় ও দুই জেলার আঞ্চলিক প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় বহু সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। সবাই অপক্ষোর প্রহর গুণছিল, কবে হবে সেই সেতু বা সুড়ঙ্গপথ। কিন্তু এখন আর অপেক্ষা নয়, স্বপ্ন পূরণের পালা। চাঁদপুরের কৃতী সন্তান, চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনের তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চাঁদপুর ও শরীয়তপুরবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।
জানা গেছে, মেঘনা নদীর ওপর শরীয়তপুর-চাঁদপুর এবং গজারিয়া-মুন্সিগঞ্জ সড়কে সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা এবং মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে ২৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকা ব্যয়ে ছয়টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন।
এ দিন অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১২তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৪তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য দুটি এবং ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ৮টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সভা শেষে অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার বলেন, সেতু বিভাগের অধীন সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীর ওপর শরীয়তপুর-চাঁদপুর ও গজারিয়া-মুন্সিগঞ্জ সড়কে সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা এবং মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে স্পেনের টেকনিকা ওয়াই প্রয়েকটস এস.এ, জাপানের নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেড, দক্ষিণ কোরিয়ার দোহওয়া ইঞ্জিনিয়ার্স কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট লিমিটেড, বিসিএল অ্যাসোসিয়েটস এবং ডেভ কনসালট্যান্ট লিমিটেডকে নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ২৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকা।
বর্তমানে চাঁদপুর-শরীয়তপুরের এই ১০ কিলোমিটার নদী পথে ফেরি চালু রয়েছে। চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট ও শরীয়তপুরের আলুবাজার ফেরিঘাটের দুই প্রান্তেই আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে। এছাড়া পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণের ডিপিপি প্রস্তুত করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
জানা গেছে, ২০০১ সালে জাপানি অর্থ সহায়ক সংস্থা (জাইকা) দেশে যে পাঁচটি দীর্ঘ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা দেয় তার মধ্যে শরীয়তপুরের আলুবাজার ফেরিঘাট থেকে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট পর্যন্ত মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। এই সেতু নির্মাণ করা হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে। আরও যে চারটি সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়, তারই একটি পদ্মা সেতু যা মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পর্যন্ত নির্মাণের কাজ এখন চলছে।
সড়ক খাতের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলুবাজার থেকে হরিণা ফেরিঘাট পর্যন্ত নদী ও চর মিলিয়ে ১০ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ২২ জেলা, সিলেটের চার জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম বা সিলেটের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ করতে কাউকে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে হবে না। ফলে রাজধানীর ওপর যানবাহনের চাপ যেমন কমবে, তেমন মানুষের চাপও কমবে।
একইভাবে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের যানবাহন বা লোকজন ঢাকা না গিয়েই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন এবং চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের পণ্য সড়কপথে পরিবহন করতে পারবে। এতে সময় যেমন বাঁচবে, তেমন পণ্য পরবিহনে ব্যয়ও কমে আসবে। ফলে বদলে যাবে এই অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা।
০৮ এপ্রিল, ২০২১।