রমজানে দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য সহনীয় রাখা ও করোনা মোকাবেলায়
স্টাফ রিপোর্টার
আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা ও চলমান কোভিট-১৯ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ সংক্রান্ত করণীয় বিষয়ে জেলা বাজার উপদেষ্টা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রোববার (৪ এপ্রিল) সকালে চাঁদপুর সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মসজলিশের সভাপতিত্বে এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মসজলিশ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, কোনো পণ্য মজুদদারী করা যাবে না। এমনিতেই মজুমদারী দণ্ডনীয় অপরাধ। যদি কোনো ব্যবসায়ী মজুদদারী করতে যান, তবে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। আমরা কঠিন আইনগত ব্যবস্থায় নেবো। তিনি ব্যবসয়ীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, প্রতিটি পণ্যের মূল্য তালিকা হালনাগাদ রাখতে হবে। আর মূল্য তালিকা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের এমন স্থানে টাঙিয়ে রাখতে হবে যাতে করে সেটি সবাই দেখতে পায়। কোনো প্রকার ছলচাতুরী করা যাবে না। প্রতিটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিক্রেতাকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। স্বস্থ্য সুরক্ষায় অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখতে হবে। আর মাস্ক পরিধান ছাড়া কোনো ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করা যাবে না। নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বেচা-বিক্রি করতে হবে। সকল জিনিসপত্রের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখবেন। আপনাদের বৈধ মালামাল পরিবহনে কোনো সমস্য দেখা দিলে প্রশাসনকে জানাবেন। জেলা প্রশাসক বলেন, এই মানবিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে এবং রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই।
পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই মহামারিতে রাষ্ট্রিয় সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আপনাকে কাজ করতে হবে। আমরা কখনোই চাইবো না, যে বাজার ব্যবস্থায় কোনো অন্যায়ের জন্যে আপনারা সাজা ভোগ করেন। বাজারের ভেতরে বাইরে ঠিক থাকলে আমাদের পুলিশ প্রশাসন আপনাদের বাধা দেবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করবেন। তিনি বলেন, চাঁদপুর সদর থানায় পুলিশ মাত্র ৫০ জন। এর বিপরীতে মানুষ কয়েক লাখ। তাই বুজতেই পারছেন যে, পুলিশের পাশাপাশি সমাজের মানুষকে এই অবস্থায় এগিয়ে আসতে হবে, কতোটা ভূমিকা নিতে হবে। তারপর আছে উপজেলা ও পৌরসভাগুলো। সব জায়গাতেই পুলিশের সংখ্যা কমই আছে। তারপরেও আমরা আমাদের মনোবল এবং সাহস নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি এবং কাজ করবো।
তিনি বলেন, পুরো জেলাজুড়েই আমাদের নজর থাকবে। আর এই নজরদারীর বাইরে গিয়ে কেউ কিছু করতে চাইলে তিনি দণ্ডিত হবেন। তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করবেন। পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখেন, নিয়ম মেনে ব্যবসা করেন, আমরা আপনাদের স্বগত জানাবো। বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি বেশি দেখে যদি মনে হয়, বাজার সিপটিং করা বা খোলা মাঠে স্থনান্তরিত করা প্রয়োজন, তবে সেটি সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে, কেউ কেউ ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করেন। মাংসে ভেজাল থাকে, ওজনে কম দেয়া হয়। আপনারা এসব করবেন না। এ বিষয়ে আপনারা সজাগ থাকবেন। কেউ এমনটি করলে আপনারা সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করবেন। আমাদের ভ্রম্যমাণ আদালত সর্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রয়েছে। আমরা চাই না, কেউ বিপদে পড়েন। ৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া লকডাউন মেনে চলবেন।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, এই দুর্যোগ মোকাবেলায় আপনাদের ভূমিকা অনেক। আপনারা আসছে রমজানেও একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা তখনি আপনাদের সহযোগিতা করবো, যখন দেখবো আপনারা সততা ও নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা করছেন। এই দূর্যোগকে পূঁজি করে মুনাফা লুটছেন না। আমি মনে করি আমাদের চাঁদপুরের বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরাই ভালো মনোভাবাসম্পন্ন। চাঁদপুরের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ী ঐতিহ্য আপনারা ধরে রাখবেন। প্রয়োজনে এই মহাদুর্যোগে সাধারণ মানুষের দিকে তাকিয়ে আগের তুলনায় লাভ কম করবেন। মানুষ আপনাদের জন্যে দোয়া করবেন। আর আপনারাও এই সমাজের বিচ্ছিন্ন কেউ নন।
চাঁদপুর চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ বলেন, আমাদের এখানে উৎপাদনমুখী পণ্য কম। তবে আমরা কোনো ঘাটতি পরবো বলে মনে হয় না। যদি আমাদের পণ্য সরবরাহের গাড়িগুলো যাতায়াতে বাঁধাগ্রস্ত না হয়, তাহলে আমরা বাজারকে অবশ্যই স্থিতিশীল রাখতে পারবো। এই ব্যপারে তিনি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সহযোগিতা কামনা করেন। তার বক্তব্য শুনে পুলিশ সুপার বলেন, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন- এই ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন এই সুবিধায় সচেষ্ট থাকবে।
সভায় জেলা মার্কেটিং অফিসার রেজাউল করিম, বিভিন্ন ব্যসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সভায় চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শানজিদা সাহনাজসহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অন্যান্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা উপস্থিত ছিলেন।
০৬ এপ্রিল, ২০২১।