শাহরাস্তিতে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার

৩ দিনের মাথায় স্ত্রী কামরুন নাহারের মৃত্যু

নোমান হোসেন আখন্দ
শাহরাস্তিতে নিজ বাড়ির ছাদ থেকে অবসরপ্রাপ্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা নূরুল আমিন (৬৫) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়া মাথায় গুরুতর জখমপ্রাপ্ত সমাজসেবায় কর্মরত বর্তমানে (পিআরএল) তার স্ত্রী কামরুন নাহার (৬১) মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির ৩ দিনের মাথায় তিনিও মৃত্যুবরণ করেছেন। এদিকে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে ৩ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) শাহরাস্তি পৌর এলাকার নাওড়া রেলগেট সংলগ্ন আমিন সাহেব বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নূরুল আমিন ও কামরুন নাহার দম্পতির ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে।
পুলিশ, স্থানীয় ও তার সন্তানরা জানান, অবসরপ্রাপ্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা নূরুল আমিন ও তার স্ত্রী কামরুন নাহার (একলা বাড়ি) তে বসবাস করেন। তাদের ৪ সন্তান ঢাকায় বসবাস করে। তাদের সন্তানরা মোবাইল ফোনে ২ দিন যাবৎ বাবা-মায়ের খোঁজ না পেয়ে, ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার নাওড়া পাটোয়ারী বাড়ী জামে মসজিদের সভাপতি শামসুল আলমের কাছে ফোনে দিয়ে তার মেজো মেয়ে জানান, তার বাবার ফোন বন্ধ রয়েছে। ওই সময় শামসুল আলম দ্রুত বাড়িতে গিয়ে দেখেন বাসায় ঢুকার প্রথম ফটকে তালা ঝুলানো। এ সময় স্থানীয়রা জানালা দিয়ে দেখতে পায় ফ্লোরে রক্ত ও তার স্ত্রী অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। এ সময় স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা ‘৯৯৯’ এ ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালে শাহরাস্তি মডেল থানার ওসি আবদুল মান্নান দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেটের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে গুরুতর আহত (মাথায় জখম) কামরুন নাহারকে ডাইনিং টেবিলের নিচ থেকে রক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। ঢাকা মেডিকেলের আইসিউতে ২ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ৩ দিনের মাথায় গতকাল শনিবার বিকেলে মারা যান। নিহত নূরুল আমিনের লাশ একতলা ভবনের ছাদে পাওয়া যায়। ওই সময় পুলিশ তার মুখে পায়ের মোজা ও মাথায় গুরুতর জখম দেখতে পায়। এ সময় তার শরীরে পোকা মাকড় দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত নূরুল আমিন নাওড়া পাটোয়ারী বাড়ী জামে মসজিজের সাধারণ সম্পাদক। প্রায় ৫ বছর আগে তিনি লাকসাম উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। তার স্ত্রী কামরুন নাহার বরুড়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে চাকরি করেন। গত ডিসেম্বর মাস থেকে অবসরগ্রহণ জনিত ছুটিতে (পিআরএল) আছেন। এ দম্পতির ২ মেয়ে বিবাহিত, ছোট মেয়ে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে (বিবিএতে) অধ্যায়নরত ও ছেলে ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করেন। ৪ সন্তানই ঢাকায় বসবাস করেন।
এদিকে নিহত নূরুল আমিনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলে গত শুক্রবার বাদ আসর তাদের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে নিহতের বন্ধু শামসুল আলম জানান, তার মেজো মেয়ের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই, পুলিশ বিষয়টি জানাই।
নিহতের মেজো মেয়ে জান্নাতুল নূর মিলি জানায়, ২৯ জুন বাবার সাথে কথা হয়। ছোট বোনের পরীক্ষার সেশনÑফির জন্য ৩৫ হাজার টাকা উঠিয়েছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। এরপর থেকে আর ফোনে বাবাকে পাওয়া যায়নি।
শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবদুল মান্নান জানান, বিষয়টি জানার পরই ঘটনাস্থলে যাই, নিহত ও আহতকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তের স¦ার্থে এখন তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহরাস্তি-কচুয়া সার্কেল) মো. আবুল কালাম ভূইয়াঁ জানান, ঘটনাস্থলের সব আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত খুনিদের সন্ধান পাবো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায় জানান, প্রাথমিকভাবে মাথায় আঘাত ও মুখে মৌজা গজানো পেয়েছি। বিল্ডিংয়ের উপর ছাদের দরজাটি খোলা ছিল। পুরো বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
ঘটনাস্থলে পুলিশের ৪টি ইউনিট, সিআইডি, ডিবি, পিআইবি ও শাহরাস্তি মডেল থানার পুলিশ কাজ করছেন।

০৪ জুলাই, ২০২১।