আগামি ২০ বছরেও নতুন করে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা থাকবে না
………পৌর মেয়র মাহবুব-উল আলম লিপন
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
উৎপাদনে যাচ্ছে হাজীগঞ্জ পৌরসভার সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (পানি শোধনাগার প্রকল্প)। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্প থেকে দৈনিক ৪৩ লাখ ২০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ সুপেয় পানি পাবেন পৌরবাসী। এতে নতুন করে ৪০ হাজার নাগরিক বা ৮ হাজার পরিবার বিশুদ্ধ ও আর্সেনিকমুক্ত পানি সুবিধা পাবে। এই প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ৩১ কিলোমিটারে বিভিন্ন আকারের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার মিঠানিয়া ব্রিজ সংলগ্ন পৌর কবরস্থানের পাশেই এই সারফেস ওয়াটার ট্রীটমেন্ট প্লান্টটি স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এর ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের এই সংকটময় সময় না থাকলে, আরো আগেই নির্মাণ কাজ শেষে এতোদিনে উৎপাদনে যেতো বলে জানিয়েছেন হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌরবাসীর মধ্যে বিশুদ্ধ ও আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের জন্য ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি দরপত্র জমাদানের শেষ দিন ছিল। দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কাজটি পায় জেই এন্ড এসটি (জেভি) নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৫ মে তাদের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।
এরপর ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি প্রায় ১২ কোটি ব্যয়ে এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ৩১ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনসহ ইতোমধ্যে প্লান্টের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভার ১০, ১১ ও ১২নং ওয়ার্ডে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপ লাইন বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, হাজীগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান জনসংখ্যা ১ লাখ ১ হাজার ৫৭০ জন। এই জনসংখ্যার মধ্যে বর্তমানে হাজীগঞ্জ পৌরসভায় ৫টি ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে ৮০টি উন্মুক্ত স্থানে এবং ৬০টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে প্রায় ৬০ হাজার নাগরিক আর্সেনিকমুক্ত পানির সুবিধা ভোগ করছেন। এর মধ্যে ২৩৮০ জন মাসিক (বিল) গ্রাহক রয়েছেন।
নব-নির্মিত এই সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু হলে শতভাগ পৌরবাসী বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি পান করতে পারবেন। এই পানি আয়রন ও আর্সেনিক মুক্ত। এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের আওতায় পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের সাথে বাকি তিনটি ওয়ার্ডের (১০, ১১ ও ১২নং ওয়ার্ড) লোকজনও বিশুদ্ধ ও সুপেয় সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
প্রকাশ থাকে যে, এর আগে উল্লেখিত তিনটি ওয়ার্ডের জনগণ সাপ্লাইয়ের পানি থেকে বঞ্চিত ছিলো। তাদের গভীর নলকূপের মাধ্যমে আর্সেনিকমুক্ত পানির ব্যবস্থা করে হাজীগঞ্জ পৌরসভা। বর্তমান মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে ১০, ১১ ও ১২নং ওয়ার্ডে নতুন করে বেশ কয়েকটি গভীর নলকূপ স্থাপন করেন এবং সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পানি সরবরাহে জন্য ১ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন স্থাপনের কাজও শেষ করেন।
পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ও ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক (পাস) মো. মাহবুবর রশীদ জানান, হাজীগঞ্জ বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদী থেকে পানি তুলে এনে সেই পানি পরিশোধন শেষে সরবরাহ লাইনে দেয়া হবে। এতে করে পৌরসভার ৪০ হাজার নাগরিক বা ৮ হাজার পরিবার আয়রন ও আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানির সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, এই সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লানটি মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন মহোদয়ের আন্তরিক চেষ্টার ফল। কারণ তৎকালীন সময়ে কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ না করায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি হাতছাড়া হওয়ার পথে ছিলো। এর মধ্যে নতুন মেয়র নির্বাচিত হলেন আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন। বিষয়টি জানার পর তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় পৌরবাসীর জন্য এই সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি উপহার হিসাবে নিয়ে আসলেন।
শ্রীঘ্রই এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন। তিনি বলেন, এই প্লান্টটি চালু হলে আগামি ২০ বছরেও পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির চাহিদা থাকবে না। পৌরসভার শতভাগ নাগরিক আর্সেনিক ও আয়রনমুক্ত পানি পান করতে পারবে। এজন্য তিনি পৌরসভার সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, পৌরবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে পেরেছি। যার মধ্যে অন্যতম হল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, হাজীগঞ্জ বাজারসহ পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন এবং বাজারের ময়লা-আবর্জনা যথাসময়ে অপসারণ, শত বছর পর টোরাগড় চর বাড়ি ও নোয়া মৃধা বাড়ির রাস্তা নির্মাণ ইত্যাদি।
০২ নভেম্বর, ২০২০।