হত্যাকাণ্ডের শিকারসহ একদিনে ৩ লাশ
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে মজনু হোসেন (২৮) নামের একজন চালককে গলায় ছুরি মেরে হত্যা এবং সড়ক দুর্ঘটনায় মো. আব্দুল আজিজ মজুমদার (২৫) নামের অপর এক পিকআপ চালক ও মো. রায়হান (১৮) নামের একজন যাত্রীসহ মোট তিনজন মারা গেছে। মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে পৌরসভাধীন ৭নং ওয়ার্ড টোরাগড় গ্রামের আনোয়ার মিজি বাড়ির একটি দোতলা ভবন থেকে হত্যাকাণ্ডের শিকার মজনু হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সোমবার দিবাগত রাতের কোন এক সময়ে ওই বাড়ির আনোয়ার মিজির ভবনে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত মজনু একই গ্রামের গাইন বাড়ির মরহুম আমিন মিয়ার সপ্তম ছেলে। তিনি পেশায় মাইক্রো চালক ছিলেন এবং নিজের গাড়ি নিজেই চালাতেন। মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীসহ ওই ভবনের দোতালায় বাসা ভাড়া থাকতেন। তার পাশের কক্ষেই তার বড় ভাই মন্টু মিয়া তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মো. আফজাল হোসেন, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন রনি, পিবিআই পরিদর্শক মো. আবু বকর সিদ্দিকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। পুলিশ ও পিবিআই মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট এবং ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ ও পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য গ্রহণ করে।
নিহতের ভাই মন্টু জানান, তার মা রুপবান বেগম ও ছোট ভাই প্রবাসী মফিজের স্ত্রী মাহমুদাসহ মজনু হোসেন একই ফ্লাটে বাসা ভাড়া থাকেন। ফøাটের সামনের রুমে মজনু ও পেছনের রুমে মাসহ তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী থাকেন। তিনি (মন্টু) স্ত্রী-সন্তানসহ পাশাপাশি কক্ষে ভাড়া থাকেন। রাতে তিনি অসুস্থতাবোধ করায় ভোরে মায়ের কাছে গিয়ে মজনুর রুমের দরজা খোলা অবস্থায় দেখতে পান।
এরপর তিনি রুমের ভিতরে প্রবেশ করে খাটের উপর লেপের নিচে মজনুর পা বাঁধা রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে তিনি চিৎকার দেন। তার চিৎকার শুনে আশ-পাশের লোকজন ও পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত হয়ে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে দেখতে পান। পরবর্তীতে মাহমদুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ, পিবিআই ও গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মো. আফজাল হোসেন জানান, হত্যাকাণ্ডের আলামত সংগ্রহ এবং বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুত রহস্য উদঘাটন এবং এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
অপরদিকে এ দিন সকালে কুমিল্লায় একটি সড়ক দুর্ঘটনায় হাজীগঞ্জের বাসিন্দা, পিকআপ (মিনি ট্রাক) চালক মো. আব্দুল আজিজ মজুমদার ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তিনি কুমিল্লা জেলার নিমসার বাজার থেকে কাঁচা বাজার (শাক-সবজি) হাজীগঞ্জে আনার উদ্দেশ্যে পিকআপ নিয়ে হাজীগঞ্জ থেকে কুমিল্লায় যান এবং সেখানেই তিনি দূর্ঘটনার শিকার হন।
নিহত আব্দুল আজিজ মজুমদার উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর মজুমদার বাড়ির মো. ফয়েজ মজুমদারের ছেলে। এ দিন দুপুরে জানাযা শেষে নিহত আব্দুল আজিজ মজুমদারকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।
এদিকে একই দিন দুপুরে শাহরাস্তি উপজেলার উয়ারুক স্টেশন বাজারের পেট্রোল পাম্পের সাথে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মিশুকের (অটোরিক্সা) যাত্রী মো. রায়হান হোসেন মারা যান। এ ঘটনায় মিশুকের চালক আরিফ হোসেন (২৩) ও শিশু যাত্রী রিশাদ (৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। উয়ারুক বাজারমুখী একটি বালুবাহী ট্রাকের সাথে হাজীগঞ্জ বাজারমুখী মিশুকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এতে করে মিশুকের চালক আরিফ হোসেন, যাত্রী মো. রায়হান হোসেন ও রিশাদ গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক যাত্রী মো. রায়হান হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মিশুকের চালক আরিফ হোসেন ও যাত্রী রিশাদকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
নিহত রায়হান হোসেন হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৯নং ওয়ার্ড এনায়েতপুর (রাজাপুর) গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। সে একটি মাদরাসায় হিফজ বিভাগের ছাত্র। এ ব্যাপারে শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল মান্নান জানান, নিহতের মরদেহ এবং মিশুক ও বালুবাহী ট্রাক পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
১৬ ডিসেম্বর, ২০২০।