মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
যানজট হাজীগঞ্জবাসীর কাছে নতুন কিছু নয়। তবে কখনো কখনো সেই যানজট ছাড়িয়ে যায় অসহনীয় মাত্রায়। গত কয়েকদিনের এমন অসহনীয় যানজটে দূর্বিষহ হয়ে উঠছে হাজীগঞ্জবাসী। প্রতিনিয়ত সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থায়ী হচ্ছে এই যানজটের আকার। ফলে রাস্তার দু’ধারে (কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক) বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত স্কুটার, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (অটোরিক্সা) ও রিক্সা-ভ্যানের দীর্ঘ সারিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারী, ক্রেতা ও যাত্রী সাধারণকে।
ভুক্তভোগীরা জানান, হাজীগঞ্জ বাজারে অবৈধভাবে ৪ স্তরে ফুটপাত ও সড়ক দখল এবং যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, গাড়িতে মালামাল ওঠা-নামা এবং চাঁদপুর-কুমিল্লা চলাচলকারী বোগদাদ ও আইদি পরিবহনের বাসগুলো ধীরগতিতে চলাচল ও যাত্রী ওঠা-নামার কারণে সার্বক্ষণিক যানজট লেগেই থাকে। এছাড়া ট্রাফিক আইন ও পুলিশের নির্দেশনা না মানার কারণে হাজীগঞ্জ বাজারে তীব্র হচ্ছে যানজট। তার সাথে যোগ হয়েছে বড় পুলের পূর্ব পাড়ে ট্রাকে তরমুজ লোড-আনলোড।
সরজেমিন দেখা গেছে, পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলো থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন সিএনজিচালিত স্কুটার ও অটোরিক্সায় প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে থাকেন। এসব পরিবহনের নির্ধারিত কোনো স্ট্যান্ড না থাকায় বাজারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে অনির্ধারিত ও অবৈধ সিএনজি-অটোরিক্সা স্ট্যান্ড বসিয়ে এবং বাজারের প্রধান সড়কের মধ্যে যেখানে সেখানে যত্রতত্র পার্কিং করে যানজটের সৃষ্টি করছেন চালকেরা।
এছাড়া বোগদাদ ও আইদি পরিবহনের বাসগুলো ধীরগতিতে চলাচল ও যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠা-নামার কারণে তীব্র হচ্ছে যানজট। এর মধ্যে হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজারস্থ বড় পুলের পূর্ব পাড়ে (হাজীগঞ্জ সেতু) মৌসুমি ব্যবসায়ীদের তরমুজ লোড-আনলোডের কারণেও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে যানজট। যা হাজীগঞ্জ পৌরসভা পর্যন্ত যানবাহনের সারী দেখা যায়।
অপরিদকে বাজারের ভিতরে পূর্ব বাজারস্থ থানা রোডের (আমিন রোড) সম্মুখ থেকে পশ্চিম বাজার শেখ সিটি শপিং কমপ্লেক্স পর্যন্ত স্থায়ী ব্যবসায়ী ও স্থায়ী হকারদের ফুটপাত দখল, ভ্রাম্যমাণ (ভ্যানগাড়ি) হকার এবং সিএনজি ও অটোরিক্সা চালকদের সড়ক দখল করে চার স্তরে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে কারণে পথচারীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর ট্রাফিক আইন এবং ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা না মানার কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। হকার ও চালকদের সাথে একটু কঠোর হলে অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশের সাথে রূঢ় আচরণ করতে দেখা গেছে। ফলে নিত্য যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাজীগঞ্জবাসীকে।
উপজেলা প্রশাসন ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত রাখতে এবং যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রায় সময়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হলেও কিছু সময় স্বস্তির কারণ হয়। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন চলে গেলেই আবারো সেই চিরচেনা রূপ ধারণ করে। অর্থ্যাৎ ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালীন সময়ে ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত থাকলেও পরবর্তী সময়ে আবারো ফুটপাত ও সড়ক দখল হয়ে যায়। এ যেন চোর-পুলিশ খেলা।
তাছাড়া যানজট নিয়ন্ত্রণে হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতি পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরকে ঘিরে ১৫জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছে। রয়েছে ট্রাফিক ও হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। কিন্তু কিছুতেই যানজট নিরসন হচ্ছে না।
এদিকে নিত্য এই যানজটে এবং ক্রেতা ও পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচল করতে না পারায় ভীড়ের সুযোগে অহরহ খোয়া যাচ্ছে (চুরি হচ্ছে) টাকা, স্বর্ণালংকারসহ নানা জিনিসপত্র। বিশেষ করে নারী চোরদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন ব্যাংকে আসা প্রবাসীর স্ত্রী ও মা বোনেরা। এছাড়া বাজারে কেনাকাটা করতে আসা নারীদের ভ্যানেটি ব্যাগ ও পুরুষদের পাঞ্জাবির পকেট কাটছে চোরচক্র।
আবার এই ভিড়ের কারণে অনেক সময় শিশু সন্তানকে হারিয়ে ফেলেন মা-বোনেরা। যদিও হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের মাইকে হারিয়ে যাওয়া ও খুঁজে পাওয়ার ঘোষণা কিংবা অনলাইন নিউজ পোর্টালে (ফেসবুক পেজ) লাইভ কিংবা মানুষের জটলার মাধ্যমে কিছু সময় বা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পরিবার খুঁজে পান তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে। তাই, সচেতন মহলের প্রশ্ন, হাজীগঞ্জ বাজারের এ যানজট নিয়ন্ত্রণ করবে কে?
কথা হয়, কয়েকজন সচেতন নাগরিকদের সাথে। তারা জানান, যানজট নিরসনে অবৈধ স্ট্যান্ড ও হকার উচ্ছেদ, যত্রতত্র যানবাহন দাঁড়ানো নিয়ন্ত্রণ (পার্কিং না করা), নির্দিষ্ট স্থান থেকে বোগদাদ ও আইদি পরিবহনের বাসগুলোতে যাত্রী ওঠা-নামা করা, ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করা, কঠোর হস্তে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ এবং দ্রুত বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হলে যানজট নিরসন সম্ভব হবে।
১৯ মার্চ, ২০২৫।