এসিএম-আইসিপিসি ২০১৮ তরুণ প্রোগ্রামারদের একদিন

এক হাত ল্যাপটপের কি-বোর্ডে, আরেক হাত মাথায়। চোখ দুটো স্থির ল্যাপটপের মনিটরে। গভীর মনোযোগে প্রোগ্রামিং সমস্যার সমাধান করছেন কলোজ যোশি। তাঁর গায়ের হলুদ টি-শার্ট যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন নেপালি এই তরুণ। তাঁর পাশে আছেন দুই বন্ধু অসীম বুদ্ধ ও সন্দ্বীপ পাখরে। তাঁরা নানাভাবে সাহায্য করছেন কলোজ যোশিকে।
এমন শত শত হলুদ ফুল দেখা গেল সেদিন (১০ নভেম্বর) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়ার স্বাধীনতা মিলনয়তনে। সারা দেশের ১০১টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন আইটি ইন্সটিটিউটের ২৯৮টি দলসহ নেপাল থেকে আসা তিনটি দল জড়ো হয়েছিল এই মিলনায়তনে। কারণ এখানে বসেছিল বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং আইসিপিসি ঢাকা অঞ্চলের আসর।
টানা পাঁচ ঘণ্টার প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন শিরোপা অর্জন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল সাস্ট ডেসাইফ্রাডর। কথা হয় বিজয়ী দলের তিন প্রতিযোগি আরাফ অভিষেক, অভিষেক পাল ও মওদুদ আহমেদ খানের সঙ্গে। ‘এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। খুবই ভালো লাগছে।’ বলছিলেন আরাফ। তাঁর উচ্ছ্বাস থামলে খানিকটা ধীর কণ্ঠে অভিষেক পাল বলেন, ‘আঞ্চলিক পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, এখন টার্গেট বৈশ্বিক পর্বেও চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সেই লক্ষ্যে নিজেকে এখন প্রস্তুত করতে হবে।’
এই সুযোগে বলে রাখি, ঢাকা অঞ্চলের প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দল দুটো আগামী বছরের ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্তুগালের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টোয় ওয়ার্ল্ড ফাইনাল প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।
এখন নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে, রানারআপ তবে হলো কারা? এই প্রতিযোগিতায় রানার আপ হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দল ‘বুয়েট-ব্লাডহুন্ড’। এই দলের সদস্য মুত্তাকিন আশিকুল, আশিকুল ইসলাম ও অর্ঘ পাল। জানতে চাই তাঁদের অনুভূতি। মুত্তাকিন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সেটা হতে পারিনি বলে যে আমরা খুব হতাশ তা নয়। সুযোগ আছে ওয়ার্ল্ড ফাইনালে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়ার। সেখানে ভালো করার জন্য নিজেদের দক্ষতাকে আরো শাণিত করতে হবে।’
মুত্তাকিনের কথায় তাল মেলান অর্ঘ পাল, ‘আমাদের হাতে আছে তিন মাস সময়। এই সময়ের মধ্যে নিজেদের মেধা ও যোগ্যতাকে আরও ঝালিয়ে নিতে হবে।’
মুত্তাকিন ও অর্ঘ যখন জানাচ্ছিলেন এইসব ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কথা, তখন অদূরে দেখা গেল ট্রফি নিয়ে সেলফি তোলায় ব্যস্ত দ্বিতীয় রানার আপ বিজয়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘ডিইউ-এপিনেফ্রিন’-এর সদস্য পিয়াল রেজওয়ান, রেজওয়ান আহমেদ ও শাহেদ শাহরিয়ারকে। তাঁদের কাছে গিয়ে জানতে চাই, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। পিয়াল জানান, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা নিজেদের কিছু সীমাবদ্ধা সনাক্ত করতে পেরেছি। এখন চেষ্টা করব এইসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার এবং আগামী প্রতিযোগিতায় ভালো করার।
এই প্রতিযোগিতায় সেরাদের তালিকায় রয়েছে আরো একটি দল–‘ডিআইইউ হিউরেস্টিক’। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এই দলটি ‘বেস্ট গার্ল টিম’ নির্বাচিত হয়েছে। দলের সদস্য হোসেন তানজিনা আফরোজ, ইশরাত জাহান ফাতেমা ও তানজিনা আফরোজ রিমি। মেয়েদের মধ্যে সেরা দল নির্বাচিত হওয়ায় তাঁরা ভীষণ উচ্ছ্বসিত। হোসেন তানজিনা বলছিলেন, ‘যেকোনো পুরস্কারই অনুপ্রেরণা জোগায়। আমরা ভীষণ অনুপ্রাণিত। ভবিষ্যতে আমরা আরো ভালো করব, ইনশাআল্লাহ!’
তানজিনাদের সঙ্গে কথা শেষ করে পিছনে ফিরতেই আবার দেখা হয়ে কলোজ যোশি, অসীম বুদ্ধ ও সন্দ্বীপ পাখরের সঙ্গে। তাঁরা ঘুরে ঘুরে বাংলাদেশি বন্ধুদের ফোন নম্বর আর ফেসবুক আইডি টুকে নিচ্ছেন। মুখে একরাশ হাসি ছড়িয়ে অসীম বুদ্ধ বলেন, ‘পুরস্কার পাইনি তো কী হয়েছে! এই যে এতগুলো বন্ধু পেলাম, এটাইবা কম কিসে?’
এভাবেই সারাদিন কেটে গেল তরুণ প্রোগ্রামারদের।