মার্কেটিং অফিসের কোন তদারকি নেই
ইল্শেপাড় রিপোর্ট
চাঁদপুরসহ সারাদেশের সবজির বাজার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে থাকায় শীত মৌসুমের শুরুতেই শাক-সবজির বাজার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে অবস্থান করছে। বাজার এতোটাই চড়া দাম যে, নাভিশ্বাস ওঠার দশায় সীমিত আয়ের মানুষরা। যার ফলে শুধু সবজি কিনতে বাজারে গেলেই কাড়ি কাড়ি টাকা গুণতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
প্রতিদিনই কোন না কোন তরকারির দাম হু-হু করে বেড়েই চলছে। মাঝে-মধ্যে পেঁয়াজ, আবার মাঝে-মধ্যে আলু! এ এক ভানুমতি খেলা শুরু হয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ঠিকই তাদের পকেট ভারি করছে। ফলে বর্তমানে সীমিত আয়ের মানুষরা মাছ-মাংস তো দূরে থাক, সবজি কিনতেই পকেট খালি হয়ে যাচ্ছে তাদের।
এসব দেখার যাদের দায়িত্ব যেই মার্কেটিং অফিসের তাদের কোন কাজই দেখতে পাচ্ছে না চাঁদপুরবাসী। মার্কেটিং অফিস তাদের পছন্দমতো মাঝে-মধ্যে কিছু ভ্রাম্যমাণ অভিযান করেই খালাস। তাও রহস্যজনক কারণে কিছুমাত্র হোটেল-রেস্তোরাঁয়। সেগুলোও করে থাকে জেলা প্রশাসনের সহায়তায়। তবে অভিযোগ বা পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন অনিয়মের খবর প্রকাশিত হলেও তারা কোন অ্যাকশনেই যান না তারা। হয়তো অনিয়মকৃত হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো তাদের নিয়মিত বখরাও দেয়। অভিজ্ঞজনদের প্রশ্ন, তারা যদি বাজার ব্যবস্থাপনায় কোন কাজই না করেন, তবে তাদের কাজটা কি?
এদিকে, চাঁদপুর শহরের প্রতিটি বাজারেই বাহারী শীতকালীন সবজি থাকলেও তাতে হাত দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রেতাদের। এক কথায় বলতে গেলে ৬০-৭০ টাকার নিচে কোনও সবজি নাই চাঁদপুরের যে কোন বাজারে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ এতটাই বিপাকে যে, না পাড়ছে বলতে না পাড়ছে সইতে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছে, অতি সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে ফসলের ব্যপক ক্ষতি হওয়ায় তার প্রভাব পড়ছে পাইকারী ও খুচরা বাজারে। সাথে তো রয়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
তবে চাঁদপুরের সবগুলো বাজারেই শীতের লাল শাক, পালংশাক আর মুলার শাকসহ অন্যান্য শাকের ব্যাপক সরবরাহ থাকলেও বাজারে যেন রয়েছে দামের আগুন। শীত যতোই বাড়বে দাম কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে স্থানীয় খুচরা বিক্রেতারা বলছে। তবে শীতের শেষে বা শীত পেরোলেই এইসব শাক সবজির স্বাদও কমতে থাকবে ক্রেতাদের কাছে।
এদিকে শহরের পাল বাজার, বিপণীবাগ বাজার, নতুন বাজার ও ওয়ারলেস বাজারে মুলা প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকা, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, বেগুণ কেজি ৮৫-১০০ টাকা, শিম কেজি ১০০-১২০ টাকা, টমেটোর কেজি ৮৫ টাকা, পটলের কেজি ৬০-৭০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা, ঢেঁড়স কেজি প্রতি ৬০ টাকা, ফুলকপি ১০০ টাকা, গাজরের কেজি ৮০-১০০ টাকা, বরবটি কেজি প্রতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছে, পাইকারি বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণেই ভালো দাম পাচ্ছে না সাধারণ চাষিরা। কিন্তু সাধারণ ক্রেতারাও কম দামে সবজি ক্রয় করতে পারছে না। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত পাইকারী বাজারের কারণেই মূলত সবজির দাম ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে। সাধারণ কৃষকদের কাছ থেকে খুব অল্পদামেই এসব সবজি কিনছেন পাইকারী ফড়িয়ারা। তারা ২০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে কেনা সবজি খুচরা বাজারে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে।
স্থানীয় ক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়ার মতো যৌক্তিক কোন কারণই খুঁজে পাচ্ছেন না। তাদের দাবি, বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ অনেক দিন ধরেই। শীতকালের সবজিতে বাজার ভর্তি। তারপরও দামের কেন এমন ঊর্ধ্বগতি, সেটিই তাদের বাধগম্য নয়। ক্রেতারা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য পাইকারী বাজারগুলোতে নিয়মিত প্রশাসনিক তদারকি প্রয়োজন।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারে সব সময় সরবরাহ করলেও, তাদের খুব বেশি একটা লাভবান হচ্ছেন না। মাঠ থেকে কম দামে তরকারি কিনে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে পকেট ভর্তি করছেন ব্যবসায়ীরা। যার কারণে গড়ে উঠো সিন্ডিকেটেই বাড়তি দামের মুনাফা লুটছেন বাজার থেকে। আর খুচরা ও সাধারণ ক্রেতারা হচ্ছেন সর্বশান্ত।
২৮ অক্টোবর, ২০২০।