চাঁদপুর শহরকে ভিন্নরূপে সাজাতে এগিয়ে যাচ্ছেন মেয়র জুয়েল

স্টাফ রিপোর্টার
সহসাই চাঁদপুর শহরের চেহারা ভিন্নরূপে দেখা যাবে। অপেক্ষা হয়তো আর বছরখানেক। শহরকে সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন এবং পায়ে হেঁটে নিরাপদে চলাচলের উপযোগী করার কাজ চলছে। যে শহরটিতে হাঁটার জন্য কোনো ফুটপাত ছিলো না, রাস্তাগুলো ছিলো খুবই সরু, সে শহরের প্রধান সড়কসহ শাখা সড়কগুলোতেও এখন ফুটপাত হয়ে যাচ্ছে। একই সাথে রাস্তাও প্রশস্ত হচ্ছে। এই ফুটপাত বের করা এবং রাস্তা প্রশস্ত করার কাজটা খুব সহজ নয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে জায়গা বের করে এনে ফুটপাত এবং রাস্তা প্রশস্ত করার কাজটা খুব দুরূহই বটে। বের করে আনা জায়গা পৌরসভারও রয়েছে, আবার ব্যক্তি মালিকানাও কিছু রয়েছে। ভোগ-দখলকারদের সাথে কথা বলে সমঝোতার মাধ্যমেই এই কঠিন কাজটি করা হচ্ছে। আর এই কঠিন কাজটি কোনো রকম হাঁকডাক ছাড়াই নীরবে করে যাচ্ছেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল।
মেয়র জুয়েল তাঁর উদ্ভাবনী চিন্তা থেকে শহরকে সাজানোর পরিকল্পনায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন তাতে পৌরবাসী মেয়রকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। ১২৫ বছরের এই পৌরসভাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার কাজ যেনো এই প্রথম কোনো মেয়র হাতে নিলেন।
ইস্ট বেঙ্গল গেটওয়ে খ্যাত চাঁদপুর শহর দেশের প্রসিদ্ধ কয়েকটি নদী বন্দরের একটি। সড়ক, নৌ এবং রেলপথ, এই তিনটি যোগাযোগ ব্যবস্থা চাঁদপুর শহরের উপর দিয়ে হওয়ায় এই শহরের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। তিন পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যবসার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি পায় চাঁদপুর। মেঘনা, ডাকাতিয়ার মিঠাপানি তো আছেই। দেশের কোনো নদনদীর পানি এতোটা স্বচ্ছ এবং সুপেয় নয়, যা চাঁদপুরের মেঘনা ও ডাকাতিয়ার পানি।
শহরটির গুরুত্ব অনুযায়ী এর উন্নয়ন কিন্তু বিগত দিনে সেভাবে হয়নি। পরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ বলতে গেলে তেমন একটা হয়নি। যে কারণে শহরটি একটা ঘিঞ্জি অবস্থায় পরিণত হয়েছিল। মানুষ হাঁটার কোনো ফুটপাত ছিলো না। রাস্তাগুলো খুবই সরু। শহরে দৃষ্টিনন্দন এবং নান্দনিক কিছুই ছিলো না। বর্তমান মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে শহরকে নান্দনিক এবং দৃষ্টিনন্দন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আর সে লক্ষ্যেই তিনি পরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন। বলতে গেলে একটি শহরকে মডেল হিসেবে গড়ে তোলার মৌলিক কাজে তিনি হাত দিয়েছেন। তিনি চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লার ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ড্রেনেজ কাজ করেছেন। শহরের এমনও এলাকা আছে যেখানে এই প্রথম পৌরসভা থেকে পয়ঃনিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। সে সাথে ওইসব এলাকায় নতুন রাস্তা করা হচ্ছে এবং রাস্তা প্রশস্ত করা হচ্ছে।
মেয়র জুয়েল তাঁর পরিকল্পিত কাজের অংশ হিসেবে প্রথমে তিনি শহরের প্রধান সড়কগুলোর মোড় এবং রাস্তা প্রশস্ত করার কাজে হাত দিয়েছেন। একইসাথে ফুটপাতও নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কাজে তিনি অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। এ কাজ করতে গিয়ে অনেক পুরোনো ভবন ভাঙ্গা পড়েছে। অনেকের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অংশ ভাঙ্গা পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাউন্ডারি দেয়াল ভাঙ্গা পড়েছে। এসবই মেয়র তাঁর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে করে যাচ্ছেন। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে- বহু মানুষের দোকানপাট এবং বাসাবাড়ির অংশবিশেষ রাস্তা এবং ফুটপাতের জন্য ভাঙ্গা পড়লেও এ নিয়ে কারই কোনো অসন্তোষ নেই। জনমানুষের কল্যাণে এবং শহরকে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন হিসেবে গড়ে তোলার স্বার্থে ব্যক্তিস্বার্থ ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ কিছুটা ক্ষুণ্ন হলেও ক্ষতিগ্রস্তরা তা মেনে নিয়েছে।
ইতোমধ্যে যেসব সড়ক এবং মোড় প্রশস্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- চাঁদপুর সরকারি কলেজের সামনে সড়ক প্রশস্তকরণ ও ফুটপাত নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু সড়ক ও মিশন রড মোড় প্রশস্তকরণ, ট্রাক রোড, জোড় পুকুর পাড় এবং এ এলাকার জেএম সেনগুপ্ত রোড, তালতলা থেকে পশ্চিম দিকে করিম পাটওয়ারী সড়ক (চলমান), হাজী মহসিন রোড (চলমান)। পর্যায়ক্রমে শহরের সকল রাস্তায় ফুটপাত করা হবে এবং রাস্তা প্রশস্ত করা হবে।
মেয়র জুয়েলের আরেকটা স্বপ্ন হলো- শহরের দু’টি লেককে একসাথ করে দিবে ছায়াবাণী এলাকায় দুই লেকের মাঝখানে সড়কের যে অংশ রয়েছে সেখানে একটা বেইলি ব্রিজ করার মাধ্যমে। অনেকট ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে করা হবে দুই লেকটাকে। এছাড়া শহরে একটা সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দিবেন। আর এটির জন্য তিনি জোড় পুকুর পাড় এলাকার পুকুরটিকে নির্বাচন করে রেখেছেন।
মেয়রের আরেকটি পরিকল্পনা হচ্ছে- শহরের স্বর্ণখোলা এলাকা থেকে ময়লার ডাম্পিং স্টেশনটি সরিয়ে ফেলা। আর বর্তমান ময়লা ফেলার স্থানটিতে একটা হাউজিং সোসাইটি করা হবে। এসব কাজের জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল।

০৪ মার্চ, ২০২৪।