ইল্শেপাড় ডেস্ক
একসময় আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার ছাত্র ছিলেন। সেই মাদরাসায়ই একটানা ৩৪ বছর মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) প্রিয় সেই হাটহাজারী আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসা প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন দেশের কওমি অঙ্গনের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
হাটহাজারী মাদরাসায় শুরা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শনিবার দুপুরের পর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মরদেহ জানাজা শেষে মাদরাসা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বায়তুল আতিক জামে মসজিদের সামনের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাদ জোহর হাটহাজারীতে আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসা মাঠে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আলেম, শিক্ষার্থী ও শুভাকাক্সক্ষীদের উপস্থিতিতে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। যদিও অনেক আগেই এ জানাজাকে কেন্দ্র করে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসা সংলগ্ন হাটহাজারী এলাকা।
জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের বড় ছেলে রাঙ্গুনিয়া পাখিয়ারটিলা কওমি মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ মাদানি। এর আগে সকাল ৯টায় তার মরদেহবাহী গাড়িটি মাদরাসা প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছায়। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর আসগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
বার্ধক্যজনিত কারণে অনেক দিন ধরে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। গত কয়েক বছরে তিনি বেশ কয়েকবার দেশ ও দেশের বাইরের হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
বৃহস্পতিবার ছাত্রবিক্ষোভের মুখে অবরুদ্ধ অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। মাদরাসার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে চট্টগ্রাম হাসপাতালে নেয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা আল্লামা শফীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে শুক্রবার সন্ধ্যার আগে ঢাকায় এনে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। প্রায় ১০৫ বছর বয়সী আল্লামা আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
১৯১৬ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করা শাহ আহমদ শফী হাটহাজারীর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম এবং ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় শিক্ষালাভ করেন। পরে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘকাল দায়িত্ব পালনের পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর এই মাদরাসার মহাপরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি নেন তিনি।
আল্লামা শফী ২০০৯ সালে আজিজুল হক ও অন্যান্য জ্যেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি একটি বিবৃতি প্রদান করেন; যেখানে ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। শাহ আহমদ শফী ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর আমিরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে; বাংলা ভাষায়- হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব, ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা, ইসলাম ও রাজনীতি, সত্যের দিকে করুন আহ্বান, সুন্নাত ও বিদ-আতের সঠিক পরিচয় এবং উর্দু ভাষায়- ফয়জুল জারি (বুখারির ব্যাখ্যা), আল-বায়ানুল ফাসিল বাইয়ানুল হক ওয়াল বাতিল, ইসলাম ও ছিয়াছাত এবং ইজহারে হাকিকাত।
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০।