মিঠা পানির মিনি সৈকত মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র

মনিরুল ইসলাম মনির
পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে মতলব উত্তরে মেঘনা নদীর পাড়ে কক্সবাজারের আদলে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা মিঠা পানির মিনি সমুদ্র সৈকত। মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েকশ’ পর্যটক দলবেঁধে নৌপথে ও সড়কপথে ঘুরতে আসছেন।
সাঁতার না জানলেও পর্যটকরা মিঠা পানির এই সমুদ্র সৈকতে সম্পূর্ণ নিরাপদে গোসলে করতে পারেন। পর্যটন কেন্দ্রের ভেতরে রয়েছে থিম পার্ক, কটেজ, মার্কেটসহ বিভিন্নœ ধরনের বিনোদন ব্যবস্থা। পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা। ভেতরে রয়েছে উন্নতমানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক রেস্তোরাঁ ‘দ্য শিপ ইন’। সভা, সেমিনার করার মতো এই রেস্তোরাঁটিতে ৫ হাজার লোক একসঙ্গে বসতে পারেন। এছাড়া রয়েছে উন্মুক্ত বার-বি-কিউ কর্নার। পর্যটন কেন্দ্রের বাইরে ঝাউবন, টেস্ট অব হেভেনসহ কয়েকটি খাবার রেস্তোরাঁ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নৌপথে লঞ্চ ও নৌকায় এবং সড়কপথে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে পর্যটকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ঘুরতে আসছেন।
নৌপথে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসা শিল্পপতি মাজাকাত হারুন মানিক বলেন, আমরা কাছেই একটা জায়গায় এসেছিলাম। চাঁদপুরের এই মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রের কথা শুনে চলে এলাম ঘুরতে। এসে দেখি এটি একটি অসাধারণ জায়গা। আমরা এখানে এসে খুবই মুগ্ধ হয়েছি। কারণ এখানে কক্সবাজারের আদলে সব কিছু করা হয়েছে। আমি মনে করি দেশের সব জায়গায় এ ধরনের সুবিধা থাকলে মানুষ উপকৃত হবেন। যারা ঘুরতে পছন্দ করেন তাদের আর বাইরে ঘুরতে যেতে হবে না।
পাশের হাজীগঞ্জ থেকে মনিরুজ্জামান নামে এক ব্যবসায়ী পাঁচ জন বন্ধু ও পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না চাঁদপুরে এতো সুন্দর পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ আমাদের বাচ্চাদের জন্য যেসব রাইডস এবং নদীতে নেমে নিরাপদে গোসল করার সুবিধা রয়েছে এটা আর কোথাও দেখিনি। এখানে এসে আমরা সবাই খুব আনন্দিত।
নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ থেকে আসা স্বপ্না আক্তার বলেন, আমরা অনেকেই লঞ্চ নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। আমরা সবাই এখানকার পরিবেশ দেখে অবাক হয়েছি। আমি সাঁতার জানতাম না। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে এখানে দীর্ঘক্ষণ সাঁতার শিখেছি। সবকিছু মিলিয়ে এখানে ঘুরতে আসা স্বার্থক হয়েছে।
এই মিনি সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৩০০ জন নারী-পুরুষের। গড়ে উঠেছে অর্ধশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কর্র্তৃৃপক্ষের দাবি আগামিতে এখানে অন্তত ২ হাজার লোকের কর্মসংস্থানসহ লক্ষাধিক লোকের রুটি রুজির ব্যবস্থা হবে।
এই পর্যটন কেন্দ্রের উদ্যোক্তা কাজী মিজান বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে আমি এটি করার পরিকল্পনা করি। দীর্ঘদিন আলাপ আলোচনা ও দেশ বিদেশে ঘুরে এটি করা হয়। তবে এটি বাস্তবায়ন হয় ২০২০ সালে। পদ্মা মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদীবেষ্ঠিত চাঁদপুর একটি পর্যটকদের জন্য উৎকৃষ্ট জেলা। বিশেষ করে মেঘনা নদীর এই মিঠা পানি বিশ্বের মধ্যে আলোচিত। এখানকার ইলিশ সবচেয়ে সুস্বাদু। এটি একটি মাল্টিপল পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে সার্বক্ষনিক ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। একেবারে কম খরচে সারা দেশ থেকে দিনে এসে দিনেই ফিরে যেতে পারছেন পর্যটকরা।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি প্রতিটি মানুষের বিনোদন প্রয়োজন। সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে বিনোদনের বিকল্প নেই। এজন্য আমি আমার ভবিষ্যত প্রজন্মের বিনোদনের কথা ভেবে এটা করেছি।

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩।