দৈনিক ৪০ টাকা ট্রলার ভাড়ায় নদী পার হয়ে পানি সংগ্রহ
সাহেদ হোসেন দিপু
হাইমচর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বেইলী গুচ্ছগ্রামের অধর্শত পরিবার বিশুদ্ধ পানিশূন্যতায় ভুগছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন এই পরিবারগুলো। বেইলী গুচ্ছগ্রামে বিশুদ্ধ পানির টিউবওয়েল না থাকায় সঠিক সময়ে খাবার খেতে পারছে না। ফলে ঐসব পরিবারগুলোর সদস্যরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা দ্রুত গুচ্ছগ্রামে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
রোববার (২০ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাজীপুর ইউনিয়নের বেইলী গুচ্ছগ্রামে শ’খানেক বসতঘর থাকলেও অর্ধশত পরিবার বসবাস করছেন এই গুচ্ছগ্রামে। এই পরিবারগুলোর জন্য নেই কোনো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, এমনকি আলোর ব্যবস্থাও নেই। তারা যেনো এক মরুভূমির মধ্যে বসবাস করছেন। চারপাশে নদী মাঝখানে জেগে উঠা চর যেনো একটি দ্বীপ। এই চরটিতে সরকার বসতভিটাহীন পরিবারের জন্য তৈরি করেছেন গুচ্ছগ্রাম। এর নাম রাখা হয় বেইলী গুচ্ছগ্রাম। এই গ্রামে প্রতিটি ঘরের সাথে একটি রান্না ঘর, টয়লেট ও অগভীর টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়। এই টিউবওয়েলের পানি পান করে ডায়রিয়াজনিত রোগসহ নানারকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব শ্রেণির মানুষ। বেশ কয়েক বছর ধরে এই চরের মানুষ বিশুদ্ধ পানির জন্য নদী পার হয়ে কাটাখালী থেকে সকাল-বিকাল এসে পানি নিয়ে পরিবারের লোকজনের তৃষ্ণা মেটান। বিশুদ্ধ পানির জন্য একটি কল চেয়ে গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আকুতি-মিনতি করেও কল পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বৃদ্ধা লতুফা বেগম জানান, আমরা এই বেইলী গুচ্ছগ্রামের লোকজন বিশুদ্ধ পানি ও আলোবিহীন মরুভূমিতে বসবাস করছি। এই গুচ্ছগ্রাম হওয়ার পর থেকে দৈনিক ৪০ টাকা ট্রলার ভাড়া দিয়ে নদীর ঐ পাড়ে গিয়ে পানি নিয়ে আসতে হয় আমাদের। পানি নিয়ে না আসা পর্যন্ত পরিবারের লোকজন বিশেষ করে শিশুরা পানির তৃষ্ণায় কাতর হয়ে থাকেন।
চানবানু বেগম জানান, কে দেখে আমাদের এই দুর্দশা। নির্বাচন আসলেই যতো প্রতিশ্রুতি, সেই অনুযায়ী যদি কাজ করতো তাহলে এই চরে একটি হলেও বিশুদ্ধ পানির কলের ব্যবস্থা করতো। পানির অভাবে আমরা যেই কষ্ট পাচ্ছি, তা শুধু উপরওয়ালাই বুঝেন। কারণ, আমরা স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানকে জানানোর পরও তারা এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেননি।
মো. আবুল কাশেম, মো. শাহজাহানসহ স্থানীয় কয়েকজন জানান, নির্বাচন আসলেই চেয়ারম্যান-মেম্বাররা চোখের পানি ফেলে ভোট ভিক্ষা করে জনপ্রতিনিধি হন। আর এখন আমরা কাঁদি। কিন্তু সেই জনপ্রতিনিধিদের চোখে জল আসে না। কারণ, পানির তৃষ্ণায় আমরা কষ্ট পাই, তারা পায় না। আমাদের মাথা বিক্রি করে তারা অর্থ উপার্জন করে টাকার মালিক হচ্ছেন। এতোবার চেয়ারম্যান-মেম্বারকে বলার পরও একটি কলও আসে না, এর চাইতে লজ্জাজনক বিষয় আর কি হতে পারে?
স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার গাজী জানান, আমার চরাঞ্চলবাসী বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোন বিশুদ্ধ পানির কল এই চরাঞ্চলে স্থাপন করা হয়নি। আমার এলাকাবাসীর স্বার্থে কষ্ট লাঘবের জন্য অচিরে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান গাজী জানান, চরাঞ্চলের মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভুগছেন- এই বিষয়টি আমাকে ইতোপূর্বে কেউ জানায়নি। আমি এখন জানতে পেরেছি, উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় বেইলী গুচ্ছগ্রামের জন্য কয়েকটি গভীর নলকূপের জন্য আবেদন করেছি। আশা করি এই চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘবে অতিদ্রুত বিশুদ্ধ পানির কল স্থাপন করতে পারবো। তাদের কষ্ট লাঘবে আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী নূর হোসেন জানান, গাজীপুর ইউনিয়নের বেইলী গুচ্ছগ্রামের জন্য দুইটি গভীর নলকূপের প্রস্তাবনা রেখেছি। আশা করি খুব দ্রুত গুচ্ছগ্রামের এই পানির সমস্যার সমাধান হবে।
২১ নভেম্বর, ২০২২।