প্রথম স্ত্রীর পর দ্বিতীয় স্ত্রীরও মৃত্যু
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে সুমাইয়া আক্তার পায়েল (২২) নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ এনে পায়েলের স্বামী নাজাত ভূঁইয়া নিস্বর্গ ও তার শ^শুর-শাশুড়িসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করে হাজীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের (নং-১৪) করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন পায়েলের বাবা সাগর হোসেন চৌধুরী।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে পায়েলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ এবং মামলায় আটক দেখিয়ে নিস্বর্গকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। এসময় নিস্বর্গের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। এর আগে শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের দেশগাঁও গ্রামের মধ্য আটিয়া বাড়ি থেকে সিলিং ফ্যানের সাথে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পায়েলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত সুমাইয়া আক্তার পায়েল ওই ইউনিয়নের দেশগাঁও গ্রামের সরদার বাড়ির সাগর হোসেন চৌধুরীর মেয়ে। অভিযুক্ত জামাতা নাজাত ভূঁইয়া নিস্বর্গ একই উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব রাজারগাঁও গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির আব্দুল মান্নানের ছেলে। নিস্বর্গের বাবা আব্দুল মান্নান ও মা জেসমিন আক্তার দেশগাঁও ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। চাকরির সুবাদে তারা দেশগাঁও গ্রামের মধ্য আটিয়া বাড়ির সাইদ মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রেমের সম্পর্কের জেরে গত বছরের ২৪ জানুয়ারি পায়েলকে বিয়ে করে নিস্বর্গ। কিন্তু এ বিয়ে মেনে নিতে পারেনি নিস্বর্গের বাবা ও মা। তাছাড়া নিস্বর্গ উগ্র স্বভাবের ও মাদকাসক্ত। বিয়ের পর থেকেই সে পায়েলকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে। সম্প্রতি সে ২ লাখ টাক যৌতুক দাবি করে। যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় পায়েলকে হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে নিস্বর্গসহ তার বাবা-মা। খবর পেয়ে পুলিশ পায়েলের মরদেহ উদ্ধার এবং অভিযুক্ত নিস্বর্গকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
স্থানীয়রা জানায়, নিস্বর্গের বাবা আবদুল মান্নান ও মা জেসমিন আক্তার দেশগাঁও ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতা করেন। তাদের ছেলে নিস্বর্গ মাদকাসক্ত। ৬ মাস রিহ্যাব (মাদকাসক্ত পূনর্বাসন কেন্দ্র) থেকে চিকিৎসা নিয়ে কোন লাভ হয়নি। সে মাদকাসক্ত। এর আগেও নিস্বর্গের প্রথম স্ত্রীকেও নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠে। ওই হত্যার মামলা ও বিচার না হওয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রী পায়েলকেও জীবন দিতে হলো।
এ বিষয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন বেলাল বলেন, পায়েল মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। এইচএসসিতে গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছিল। তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ আছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে নিস্বর্গ ও তার পরিবারকে সতর্ক করা হয়েছে। তবুও মেয়েটিকে বাঁচানো গেল না।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত নাজাত ভূঁইয়া নিস্বর্গ জানান, তার প্রথম স্ত্রী অসুস্থতার কারণে মারা গেছে। পায়েলের বিষয়ে তিনি বলেন, একসাথেই রুমে ছিলাম। এরপর আমি বাথরুম থেকে ফিরে এসে দেখি আমার রুমের দরজা বন্ধ। তখন আমি ডাকাডাকি করতে থাকি। পরে দেখি সে (পায়েল) ফ্যানের সাথে ফাঁস দিয়েছে।
নিস্বর্গের বাবা আব্দুল মান্নান জানান, প্রথম পুত্রবধূ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তাদের পরিবারের সাথে সম্পর্ক ভালো থাকার কারণে, এখনো ওই পরিবারের লোকজন তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন। আর পায়েল ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে কি কারণে সে আত্মহত্যা করেছে, এ বিষয়ে তিনি বলতে পারবেন না।
এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক জানান, নিহত পায়েলের বাবা তার জামাতা নিস্বর্গ ও তার বাবা-মাসহ আরো কয়েকজন অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা (নং-১৪) দায়ের করেছেন। ওই মামলা জামাতা নিস্বর্গকে আটক দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পায়েলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪।